Varietal Development
১) উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে প্রতিকূল ও অপ্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এই পর্যন্ত
১১৫টি (১০৭টি ইনব্রিড ও ৮টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
তম্মধ্যে:
- ৫৩টি জাত বোরো মওসুমের জন্য (১২টি জাত বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী)
- ২৭ টি জাত বোনা এবং রোপা আউশ মওসুম উপযোগী
- ৪৬ টি জাত রোপা আমন মওসুম উপযোগী
- ১২টি জাত বোরো ও আউশ উভয় মওসুম উপযোগী
- ১টি জাত বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মওসুম উপযোগী
- ১টি জাত বোনা আমন মওসুম উপযোগী।
উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ অজৈব ঘাত সহনশীল যেমন লবণাক্ততা, বন্যা, খরা, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ Marker Assisted Breeding পদ্ধতি প্রয়োগ করে আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতসমূহের মধ্যে বিভিন্ন ঘাত যেমন বন্যা, লবণাক্ততা, ঠান্ডা সহনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী জিন প্রবেশ করিয়ে ঘাত সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে সফলতা লাভ করেছে। সম্প্রতি এই বিভাগ TRB (Transforming rice breeding) প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সাথে তাল মিলিয়ে RGA (Rapid generation advance), Low density and high density genotyping, Digital barcoding, Automation in post-harvest technology ইত্যাদি পদ্ধতির বিজ্ঞানসম্মত প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী দিনের ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অত্র বিভাগের বিজ্ঞানীগণ দক্ষ জনসম্পদ তৈরির অংশ হিসেবে মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীদের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আধুনিক ধানের জাত ও প্রজনন পদ্ধতির বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, কৃষকগণ, NARS এবং বিদেশী বিজ্ঞানীবৃন্দ, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং NGO কর্মীদের নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। অত্র বিভাগ কর্তৃক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, বার্ষিক প্রতিবেদন, গবেষণা পুস্তিকা, অবমুক্ত জাতসমূহের লিফলেট ও বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে।
এক নজরে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মওসুম ভিত্তিক সাফল্য
১। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অর্জন: আউশ মওসুম
- বিআর২১, বিআর২৪, ব্রি ধান২৭ এবং ব্রি ধান৬৫ বৃষ্টিবহুল এলাকায় বোনা আউশ হিসেবে চাষের উপযোগী। বোনা আউশের জাত ব্রি ধান৬৫ এর ফলন ক্ষমতা ব্রিধান ৪৩ থেকে ০.৫ টন/হে. বেশী। এ জাতটির চারা অবস্থায় আগাছার সাথে প্রতিযোগিতা করে বেড়ে ওঠার ক্ষমতা ব্রি ধান৪৩ থেকে বেশী।
- ব্রি ধান৪২, ব্রি ধান৪৩ এবং ব্রি ধান৮৩ খরা-প্রবণ এলাকায় বোনা আউশ হিসেবে চাষের উপযোগী। ব্রি ধান৮৩ বোনা আউশ মওসুমে চারা অবস্থায় মধ্যম মাত্রার খরা সহনশীল ধানের জাত। এ জাতের দানার রং স্থানীয় কটকতারা জাতের মতো লালচে। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান৮৩ চাষে হেক্টর প্রতি ৪.০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বিশেষ করে ব্রি ধান৮৩-এর ফলন ব্রিধান ৪৩ এর চেয়ে কমপক্ষে ১.০টন/হেক্টর বেশী এবং সরাসরি বপনযোগ্য। এটি বোনা আউশের জাত বিধায় এ জাতটি চাষ করলে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল যেমন নোয়াখালী, ফেনী ও চরাঞ্চলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি ব্রি ধান৮৩ রোপা আউশ হিসেবে চাষেরও অনুমোদন লাভ করেছে।
- বিআর২৬, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৮২ এবং ব্রি ধান৯৮ সাধারণ রোপা আউশ এলাকায় চাষের উপযোগী। রোপা আউশ মওসুমের জাত ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান২৭ থেকে ১০ দিন আগাম এবং হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন ফলন বেশী দেয়। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান৫৫ আউশ মওসুমে ৫.০টন/হে. ফলন দিতে সক্ষম।
- ব্রি ধান৮২ NERICA-10 থেকে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচন পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত রোপা আউশ মওসুমের স্বল্প জীবনকালীন ধানের জাত। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান৮২ থেকে হেক্টরে ৪.৫-৫.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ধান৮২-এর জীবনকাল রোপা আউশ মওসুমের ব্রি ধান৪৮ এর চেয়ে ৪-৫ দিন কম। এ জাতটির জীবনকাল স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় রোপা আউশ মওসুমে এ ধান আবাদ করার পর আমন ধান আবাদের সুযোগ তৈরি হবে। ব্রি ধান৯৮ রোপা আউশ মওসুমে চাষ উপযোগী জাত। এর ফলন প্রতি হেক্টরে ৫.০ থেকে ৫.৮ টন। এর দানা লম্বা ও রং সোনালী। এ জাতের জীবনকাল ১১২ দিন যা রোপা আউশ মওসুমের জাত বিআর২৬ এর সমান। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২২.৬ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.৯ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।
- ব্রি ধান২৭ বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে রোপা আউশ মওসুমে চাষাবাদযোগ্য। রোপা আউশ মওসুমের জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান৪৮ যার ফলন ক্ষমতা ৫.৫ টন/হেক্টর এবং গড় জীবনকাল ১১০ দিন। ব্রি ধান৮৫ রোপা আউশ মওসুমে কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য উদ্ভাবিত জাত। এ জাতের ফলন ক্ষমতা ৪.৫-৫.৫ টন/হেক্টর। ব্রি ধান৮৫ কিছুটা জলাবদ্ধতা সহনশীল হওয়ায় এ জাতটি আউশ মওসুমে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাতে বিশেষত: কুমিল্লা অঞ্চলসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে চাষাবাদের জন্য।
- ব্রি ধান১০৬ রোপা আউশ মওসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত । এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এ জাতের গাছের গোড়ায় ও ধানের দানার মাথায় বেগুনি রং বিদ্যমান। এর গড় উচ্চতা ১২৫ সে.মি.। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.৭৯ টন যা অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান২৭ এর চেয়ে শতকরা ১৭.৪ ভাগ বেশি। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০৬ এর ফলন হেক্টর প্রতি ৫.৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। নতুন জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঢলে পড়া প্রতিরোধী, ফলে গাছ হেলে পড়ে না। ধানের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালী বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১১৭ দিন । ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় এ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৫ ভাগ। ভাত ঝরঝরে।
২। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অর্জন: আমন মওসুম
- রোপা আমন মওসুমের নাজিরশাইলের ন্যায় দানা বিশিষ্ট জাত ব্রি ধান৪৯, যা বিআর১১ এর তুলনায় এক সপ্তাহ আগাম এবং ফলন ক্ষমতা ৫.৫ টন/হেক্টর।
- ব্রি ধান৭০ এবং ব্রি ধান৮০ লম্বা চিকন সুগন্ধি ধানের জাত যা রোপা আমন মওসুমের জন্য স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট (১৩০ দিন) এবং ফলন ক্ষমতা ৫.০ টন/হেক্টর।
- ব্রি ধান৯০ রোপা আমন মওসুমের উচ্চ ফলনশীল প্রিমিয়াম কোয়ালিটি আধুনিক ধানের জাত। এ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ধানের দানার আকার-আকৃতি ব্রি ধান৩৪ এর মতো। এ জাতের গড় ফলন ৫.০ টন এবং গড় জীবন কাল ১২২ দিন। ব্রি ধান৯০ এর জীবনকাল ব্রি ধান৩৪ এর চেয়ে ২১ দিন আগাম এবং ফলন প্রায় ১.০-১.৪ টন/হেক্টর বেশি। এ জাতের চাল থেকে উন্নতমানের পোলাউ, পায়েস রান্না করা যায়।
- ব্রি ধান৯১ জলি আমন ধানের জাত ও অগভীর পানিতে চাষের উপযোগী। এ জাতটি স্বল্প আলোক-সংবেদনশীল। গড় জীবনকাল ১৫৬ দিন। স্থানীয় জলি আমন ধানের জাতের চেয়ে ১০-১৫ দিন আগাম। এ জাতটির গড় ফলন ৩.০টন/হেক্টর। এ জাতটি ১ মিটার উচ্চতার গভীর পানির বন্যা অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
- ব্রি ধান৯৩ ও ব্রি ধান৯৪ রোপা আমন মওসুমের উচ্চফলনশীল ১৩৪ দিনের মাঝারি জীবনকাল সম্পন্ন ধানের জাত। এ জাত দুইটির গড় ফলন ৫.৮টন/হেক্টর। ব্রি ধান৯৫ রোপা আমন মৌসুমের উচ্চফলনশীল ১২৫ দিন জীবনকালসম্পন্ন আগাম ধানের জাত। গড় ফলন ৫.৭টন/হেক্টর। ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪ এবং ব্রি ধান৯৫ জাতগুলো উচ্চফলনশীল এবং স্বর্ণা জাতের ন্যায় গুণাগুণ এবং অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় ভারতীয় স্বর্ণা জাতের বিকল্প হিসাবে চাষাবাদযোগ্য।
- আলোক-সংবেদনশীল বিআর২২, বিআর২৩ এবং ব্রি ধান৪৬ নাবী রোপা আমন মওসুমে বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর এই জাতগুলো অধিক উপযোগী।
- রোপা আমন মওসুমের অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের জন্য ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৬ এবং ব্রি ধান৭৭ উদ্ভাবন করা হয়েছে।
- বিআর২৫, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৩, ব্রিধান৩৯, ব্রিধান৭৫ জাতগুলোতে আলোক-সংবেদনশীলতা নেই। আলোক-সংবেদনশীলতা না থাকার জন্য এ জাতগুলো কৃষক তার ইচ্ছামতো যেদিন ফসল কাটতে ইচ্ছুক সেদিনেই তা পারেন। ব্রি ধান৭৫ রোপা আমন মওসুমের উচ্চফলনশীল আগাম ধানের জাত এবং এর গড় ফলন ৫.০টন/হেক্টর। ব্রি ধান৭৫-এর ভাত রান্না করলে হালকা সুগন্ধ পাওয়া যায়।
- বৃষ্টি নির্ভর নিম্নভূমি অঞ্চলের জন্য বিআর১০, ব্রি ধান৩০ এবং ব্রি ধান৩১ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ জাতগুলো স্বল্প আলোক-সংবেদনশীল এবং ফলন ক্ষমতা হেক্টর প্রতি ৫.০-৬.০টন। এছাড়া বিআর১০, বিআর২৩ এবং ব্রি ধান৩০ জাতগুলো বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের জলাবদ্ধ অঞ্চলের জন্য অধিক উপযোগী।
- তিনটি বন্যা সহনশীল ধানের জাত যথা ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২ এবং ব্রি ধান৭৯ উদ্ভাবন করা হয়েছে যা দুই-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা সহনশীল।
- ৪টি খরা সহনশীল আমন ধানের জাত যথা ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১ উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য খুবই উপযোগী।
- রোপা আমন মওসুমের জন্য দুটি জিংক সমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান৬২ এবং ব্রি ধান৭২ (স্বল্প জীবনকাল) উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো যথাক্রমে ২০ এবং ২২.৮ পিপিএম মাত্রার জিংক সমৃদ্ধ।
- তাছাড়া, লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪ এবং ব্রি ধান৭৩ এই জাতগুলো আমন মওসুমে প্রজনন পর্যায়ে ৮ ডিএস/মি. লবণাক্ততা সহনশীল।
- ব্রি ধান৭৮ আমন মওসুমের উপযোগী বন্যা ও লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত। এটির জীবনকাল ১৩৩ থেকে ১৩৬ দিন, ফলন ক্ষমতা ৫.৫ থেকে ৬.০টন/হেক্টর।
৩। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অর্জন: বোরো মওসুম
- বোরো মওসুমের জন্য উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৫৯ এবং ব্রি ধান৬০ উদ্ভাবন করা হয়েছে। ব্রি ধান৫৮ সর্বপ্রথম জাত যা ব্রি ধান২৯ হতে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি বোরো মওসুমের জাত যা ব্রি ধান২৯-এর চেয়ে ৭-১০ দিন আগাম কিন্তু ব্রি ধান২৮-এর চেয়ে এক সপ্তাহ নাবী। জীবন কাল ১৫০-১৫৫ দিন। ফলন ক্ষমতা ৭.০-৮.০ টন/হেক্টর। আলু কাটার পরে নাবী বোরো এবং দক্ষিণাঞ্চলের ঘেরের মধ্যে চাষে বিশেষ উপযোগী।
- অত্র বিভাগ কর্তৃক লবণাক্ততা সহনশীল বোরো মওসুমের জন্য ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬১ এবং ব্রি ধান৬৭ আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যা চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মি. এবং সম্পূর্ণ জীবনচক্রে ৬-৮ ডিএস/মি. লবণাক্ততা সহনশীল। বোরো মওসুমের জন্য লবণাক্ততা সহনশীল নতুন ২টি জাত ব্রি ধান৯৭ এবং ব্রি ধান৯৯ উদ্ভাবন করা হয়েছে যা চারা অবস্থায় ১৪ ডিএস/মি. এবং সম্পূর্ণ জীবনচক্রে ৮-১০ ডিএস/মি. লবণাক্ততা সহনশীল।
- বোরো মওসুমের জিংক সমৃদ্ধ জাত ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৪, বঙ্গবন্ধু ধান১০০ এবং ব্রি ধান১০২ উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো যথাক্রমে ২৫.৫, ২৪.২, ২৭.৬, ২৫.৭ ও ২৫.৫ পিপিএম মাত্রার জিংক সমৃদ্ধ। নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০২ এর গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৮.১ টন। তবে এটি উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৯.৬ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। জাতটি বাংলাদেশের মানুষের দৈনিক জিংকের চাহিদার প্রায় ৫০-৭০% পূরণ করতে সক্ষম হবে।
- ব্রি ধান৫০ যার জনপ্রিয় নাম বাংলামতি (বাসমতীর ন্যায়) এবং ব্রি ধান৬৩ (সরু বালামের ন্যায়), এই দুইটি প্রিমিয়াম বৈশিষ্ট্যের ধানের জাত অনুকূল বোরো মওসুমের জন্য উপযোগী।
- আধুনিক ধানের জাত যেমন বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯ হাওড় এলাকার বোরো মওসুমের জন্য অধিক উপযোগী। তাছাড়া বিআর১৮, ব্রি ধান৩৬, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৬৭ এবং ব্রি ধান৬৯ চারা অবস্থায় ঠান্ডা সহনশীল হওয়ায় ঠান্ডা প্রবণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জন্য উপযোগী। ব্রি ধান৬৭ এবং ব্রি ধান৬৯ প্রজনন পর্যায়েও মধ্যম মাত্রার ঠান্ডা সহ্য করতে পারে।
- ব্রি ধান৫৫ মধ্যম মাত্রার ঠান্ডা, লবণাক্ততা ও খরা সহিষ্ণু। বোরো মওসুমে যেখানে মধ্যম মানের লবণাক্ততা (৮-১০ ডিএস/মি), খরা এবং ঠান্ডা সমস্যা দেখা যায় সেখানেও এ জাতটি আবাদের জন্য উপযুক্ত। এ ধানের জাতটি বোরো মওসুমে ব্রি ধান২৮ খেকে ৫ দিন নাবী এবং হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন ফলন বেশী দেয়।
- ব্রি ধান৫৯ এবং ব্রি ধান৬০ দুটি আধুনিক ধানের জাতের জীবনকাল ব্রি ধান২৮ এবং ব্রি ধান২৯ এর মাঝামাঝি এবং ফলন ক্ষমতা ৭.১-৭.৩ টন/হেক্টর। ব্রি ধান৬০ এর দানার আকার অতিরিক্ত লম্বা ও চিকন।
- ব্রি ধান৬৮ অনুকূল বোরো মওসুমের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে যার চাল মাঝারি মোটা, হেলে পড়া সহনশীল এবং ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে ১৩% অধিক ফলন দেয় কিন্তু এটা ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে এক সপ্তাহ বেশি জীবনকাল সম্পন্ন। ব্রি ধান৬৯ উপকরণ সাশ্রয়ী বোরো মওসুমের উচ্চ ফলনশীল জাত যা ৭.০ টনের অধিক ফলন দেয়। উল্লেখ্য যে, ব্রি ধান৬৯ প্রজনন পর্যায়ে মাঝারি মানের ঠান্ডা সহ্য করতে পারে।
- ব্রি ধান৮১ জাতের জীবনকাল ১৪০-১৪৫ দিন এবং ফলন ক্ষমতা হেক্টরে ৬.০-৬.৫টন। উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ (১০.৩%) এ জাতটি সুগন্ধ ব্যতীত প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালের আকার ও আকৃতি বাসমতির মত লম্বা ও চিকন থাকায় বিদেশে রপ্তানীযোগ্য। এছাড়া চালের আকৃতি জিরার ধানের মতো বিধায় জাতটি দেশীয় বাজারে জিরা ধানের বিকল্প হিসাবে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে। ব্রি ধান৮৮ জাতের জীবনকাল ১৪০-১৪৩ দিন এবং ফলন ক্ষমতা ৭.০টন/হেক্টর। স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন বোরো ধানের জাত হিসেবে বিশেষভাবে উপযোগী।
- ব্রি ধান১০১ বোরো মওসুমের প্রথম ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী আধুনিক ধানের জাত। ধানের দানার রং সোনালী, লম্বাটে চিকন এবং জাতটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় মাঠ সবসময় পরিচ্ছন্ন মনে হয়। এ জাতের জীবনকাল অঞ্চলভেদে ১৩৫-১৫২ দিন । গড় জীবনকাল ১৪২ দিন, যা বোরো মওসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান৫৮ এর চেয়ে ৪ (চার) দিন আগাম। এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৭২ টন, তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এর ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৯৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৩.১ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি লম্বাটে চিকন এবং রং সাদা। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৫.০ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯.৮ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। জাতটিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ প্রতিরোধী প্রকট জিন Xa21, Xa4, Xa7 বিদ্যমান এবং কৃত্রিমভাবে জীবানু ইনোকুলেশনের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা (স্কোর-১) প্রদর্শন করেছে।
- ব্রি ধান১০৪ বোরো মওসুমের গুনগত মানসম্পন্ন আধুনিক ধানের জাত। এর গড় উচ্চতা ৯২ সে. মি. এবং গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। এ জাতের হেক্টরে গড় ফলন ৭.২৯ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম । ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। চালের আকার আকৃতি অতি লম্বা চিকন, বাসমতি টাইপের এবং রং সাদা। এ ধানের দানায় এ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এ জাতটি বাসমতি টাইপের ব্রি’র সুগন্ধী ধানের অন্যতম জাত।
- ব্রি ধান১০৫ হল বোরো মওসুমের একটি কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই: ৫৫.০) সম্পন্ন ডায়াবেটিক ধান। কম জিআই হওয়ার কারনে এটি ডায়াবেটিক চাল হিসাবে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে বলে আশা করা যায়। গড় ফলন হেক্টরে ৭.৬ টন; তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এই জাতের ১০০০টি দানার ওজন ১৯.৪ গ্রাম। ব্রি ধান১০৫ এর এ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.০% এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৭.৩%। চালের আকার আকৃতি লম্বা চিকন এবং রং সাদা। এর রান্না করা ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু।
- ব্রি ধান১০৭, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। ব্রি ধান১০৭ এর স্থানীয় নাম লতা বালাম। ব্রি ধান১০৭ এর গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন যা ব্রি ধান৫০ এর প্রায় সমান। প্রতি হেক্টরে ব্রি ধান১০৭ এর গড় ফলন ৮.১৯ টন, তবে এটি অনুকূল পরিবেশে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টর প্রতি ৯.৫৭ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ ধানের গুণগতমান ভালো অর্থাৎ চালের আকৃতি অতি লম্বা চিকন (৭.৬ মি.মি.)। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজ এবং প্রোটিন এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৯.১% এবং ৯.৮% এবং ভাত ঝরঝরে। ব্রি ধান১০৭ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ২৬.১ গ্রাম। এ ধানের দানার রং খড়ের মত এবং চাল অতি চিকন ও সাদা। উচ্চ ফলনশীল, অতি চিকন চাল ও ভাত ঝরঝরে হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এ জাতটি চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহী হবে বলে আশা করা যায় এবং ফলশ্রুতিতে ব্রি ধান১০৭ বাংলাদেশের সামগ্রিক ধান উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
- ব্রি ধান১০৮ উফশী জাতটি বোরো মওসুমে সারা দেশে চাষের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো মিডিয়াম স্লেন্ডার (medium slender grain). এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত। ব্রি ধান১০৮ হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন । এই জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়া ও ব্রান্ডিং করার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। ব্রি ধান১০৮ এ উচ্চ ফলন ও ফাইন গ্রেইন এর সমন্বয় ঘটেছে । এ জাতটির গড় ফলন ৮.৫ টন/হে যা ব্রি ধান১০০ জাতের চেয়ে ১.০-১.৫ টন/হে বেশী। ব্রি ধান১০৮ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬.৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন যা জিরা চালের অনুরুপ, ভাত ঝরঝরে, রং সাদা এবং আ্যমাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪.৫% এবং ৮.৮ %।
২) জীব প্রযুক্তি বিভাগ
১। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জীব প্রযুক্তি বিভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ৬টি উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন।
তম্মধ্যেঃ
- ৪টি জাত বোরো মওসুমের জন্য।
- ২টি জাত রোপা আমন মওসুম উপযোগী
i) ব্রি ধান৮৬ বোরো মওসুমের একটি স্বল্পমেয়াদী, উচ্চফলনশীল, ঢলেপড়া প্রতিরোধী এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ (১০.১%) ধানের জাত। ব্রি ধান৮৬ উদ্ভাবিত সর্বপ্রথম জাত। এ জাতটি প্রতি হেক্টর গড়ে ৬.৫ টন ফলন দেয়। এ জাতের জীবন কাল ১৪০-১৪৫দিন। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯৫ সেঃ মিঃ। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২২.৪ গ্রাম। এ ধানের অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫.০%। এ জাতটি সুগন্ধ ব্যতীত প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ধানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। চালের আকার ও আকৃতি লম্বা ও চিকন থাকায় বিদেশে রপ্তানীযোগ্য। এছাড়া চালের আকৃতি জিরার ধানের মতো বিধায় জাতটি দেশীয় বাজারে জিরা ধানের বিকল্প হিসাবে গ্রহণ যোগ্যতা পাবে। এ জাতটি সারা দেশের জন্য চাযাবাদের উপযোগী তবে দেশের উত্তর অঞ্চলে ফলন বেশী ভাল হয়।
ii) ব্রি ধান৮৭ রোপা আমন মওসুমের উচ্চফলনশীল একটি ধানের জাত। এ জাতটি প্রতি হেক্টর গড়ে ৬.৫ টন ফলন দেয়। এ জাতের গড়ে জীবন কাল ১২৭দিন যা বিআর১১ এর চেয়ে ১৭ দিন এবং ব্রি ধান৪৯ এর চেয়ে ৭দিন আগাম।। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২২ সেঃ মিঃ। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.১ গ্রাম। এ ধানের অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭.০%। এ জাতটি সারা দেশের জন্য চাযাবাদের উপযোগী।
iii) ব্রি ধান৮৯ বোরো মওসুমের একটি দীর্মেয়াদী, উচ্চফলনশীল এবং ঢলেপড়া প্রতিরোধী ধানের জাত যা ব্রি ধান২৯ এর পরিপূরক। এ জাতটি হেক্টরে গড়ে ৮.০ টন পর্যন্ত ফলন দেয়। এ জাতের জীবন কাল ১৫৪-১৫৮ দিন। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৬ সেঃ মিঃ। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.৪ গ্রাম। এ ধানের অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮.৫%। এ জাতটি সারা দেশের জন্য চাযাবাদের উপযোগী।
iv) ব্রি ধান৯২ বোরো মওসুমের একটি দীর্মেয়াদী, উচ্চফলনশীল, ঢলেপড়া প্রতিরোধী এবংপানি সাশ্রয়ী ধানের জাত। এ জাতটি প্রতি হেক্টর গড়ে ৮.৫ টন ফলন দেয়। এ জাতের জীবন কাল ১৫৮-১৬০দিন। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০৭ সেঃমিঃ। দানা লম্বা ও চিকন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৪ গ্রাম। এ ধানের অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬%।এ জাতটি ব্রি ধান২৯ এর চেয়ে ১ টন বেশী ফলন দেয়। এটা ব্রি ধান২৯ এর একটা বিকল্প ভাল জাত। এ জাতটি সারা দেশের জন্য চাযাবাদের উপযোগী। তবে এটি একটি পানি সাশ্রয়ী জাত যা চাষে তুলনামুলক কম পানিতে ব্রি ধান২৯ এর মত ফলন দিতে সক্ষম। তাই এই জাতটি দেশের খরা প্রবণ এলাকায় চাষাবাদের জন্য বেশী উপযোগী।
v) ব্রি ধান৯৬ বোরো মওসুমের একটি স্বল্পমেয়াদী, উচ্চফলনশীল, ঢলেপড়া প্রতিরোধী এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ (১০.৮%) ধানের জাত। পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৮৭ সেঃমিঃ। এ জাতটি প্রতি হেক্টর গড়ে ৭ টন ফলন দেয়। এ জাতের জীবন কাল ১৪০-১৪৫দিন।চাল ও ভাতের অনুপাত ১.৬। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৮.৪গ্রাম। এ ধানের অ্যামাইলোজের পরিমাণ২৮%। এই জাতটি ধানের রং স্বর্ণা জাতের ন্যায় সোনালী বর্ণের। এ জাতটি ব্রি ধান২৮ এর পরিপূরক ধানের জাত । এই জাতটি সারা দেশের জন্য চাযাবাদের উপযোগী।
২। জিন পিরামিডিং এর মাধ্যমে ব্রি ধান২৯ এবং ব্রি ধান২৮ এর মধ্যে ব্যাক্টেরিয়াল ব্লাইট রোগ সহিষ্ণু জিন প্রবেশ করে ব্যাক্টেরিয়াল ব্লাইট রোগ সহিষ্ণু ৫টি কৌলিক সারি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
৩।মার্কার এসিস্টেড সিলেকশন (MAS) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রি ধান৪৪ এর মধ্যে জলমগ্নতা সহিষ্ণু Sub1 QTL ঢুকিয়ে কিছু হোমোজাইগাস জলমগ্নতা সহিষ্ণু অগ্রগামী কৌলিক সারি তৈরী করা হয়েছে। বর্তমানে এই সারিগুলি উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কর্তৃক মাঠে বিভিন্ন পর্যায়ে ফলন পরীক্ষা করা হচ্ছে।
৪।লবনাক্ততা সহিষ্ণু GlyI এবং GlyII জিন ব্রি ধান২৯ এর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে লবনাক্ততা সহিষ্ণু ব্রি ধান২৯ এর কিছু ট্রান্সজেনিক কৌলিক সারি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
৫।ব্রি উদ্ভাবিত ৫০টি ধানের জাতের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এই তথ্যগুলো একটি পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
৬। বৈচিত্রতা বিশ্লেষণ ও জাত রক্ষা করার জন্য SSR মার্কার ব্যবহার করে ১২৭টি স্থানীয় আউশ ধানের জাতের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং করা হয়েছে।
৭। অত্র বিভাগের বিজ্ঞানীগণ দক্ষ জনসম্পদ তৈরির অংশ হিসেবে মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীদের সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৮। অত্র বিভাগ কর্তৃক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র, বার্ষিক প্রতিবেদন, গবেষণা পুস্তিকা, অবমুক্ত জাতসমূহের লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে।
৩) কৌলিসম্পদ ও বীজ বিভাগ
কৌলিসম্পদ ও বীজ বিভাগ ব্রি’র জাত উদ্ভাবন প্রোগ্রাম এরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বিভাগের ম্যান্ডেট হলো ধানের জাত উদ্ভাবন, জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং সীড টেকনোলজি রিসার্চ। জার্মপ্লাজম ম্যানেজমেন্ট এই বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা যেকোনো গবেষণার মূল উপাত্ত। এছাড়াও এই বিভাগ মানসম্মত ব্রিডার বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে ব্রি’র এপিএ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এই বিভাগের উল্লেখযোগ্য অর্জনগূলো নিম্নরুপঃ
১. এই বিভাগ হতে একটি সুগন্ধী ধানের জাত (খাসকানি নামক জার্মপ্লাজম থেকে ব্রি ধান ৩৪) অবমুক্ত করা হয়েছে।
২. ২০০৭ সালে দীর্ঘমেয়াদি জিনব্যাংক (২০০০ সিএফটি ভলিউম) স্থাপন করা হয়। যাতে প্রায় ২২,০০০টি জার্মপ্লাজম প্যাকেট ৫০-১০০ বছর সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে।
৩. জিআরএস বিভাগের জিনব্যাংকে ৯,০০৬ (নয় হাজার) টি এর অধিক জার্মপ্লাজম স্বল্প মেয়াদ, মধ্যম মেয়াদ এবং দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষিত আছে।
৪. এক হাজার দুই শত এর বেশী জাত বিভিন্ন বায়োটিক এবং এবায়োটিক ফ্যাক্টরের বিপরীতে মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং এখান থেকে ৫৭২টি জার্মপ্লাজম বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ে মধ্যম থেকে অতিমাত্রায় প্রতিরোধী এবং ৪০৮টি জার্মপ্লাজম বিভিন্ন এবায়োটিক ফ্যাক্টরে সহনশীল হিসাবে সনাক্ত করা হয়েছে।
৫. প্রায় ১,৬৬৪ (এক হাজার ছয়শত চৌষট্টি) টি বিদেশী (exotic) ইন্ডিকা ও ১১১ (এক শত এগার) টি জাপোনিকা ধানের জাত সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে।
৬. প্রায় ৯০টি বন্য (wild) ধানের জার্মপ্লাজম ব্রি তে এক্স সিটু ফিল্ড জীনব্যাংক হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
৭. ব্রি সদর দপ্তরে ৩০০টি এর অধিক দেশী ধানের জাত সংকরায়ন প্রোগ্রামে প্যারেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১৮টি আধুনিক ধানের জাত, দেশী জাতকে প্যারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে উদ্ভাবিত হয়েছে (বিআর৩, বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, বিআর২৫, ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮২, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯৬, ব্রি ধান১০৩ ও এর মধ্যে বিআর৫ এবং ব্রিধান৩৪ দেশী ধানের জাত থেকে সরাসরি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে)।
৮. এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০০টি ধানের জার্মপ্লাজম SSR Marker দ্বারা মলিকুলার লেভেলে বৈশিষ্ট্যায়ন করা হয়েছে।
৯. প্রায় ৩৮৩ (তিন শত তিরাশি) টি স্থানীয় জাতের ধানের জার্মপ্লাজম এক্সেশনের জিবিএস (Genotype by Sequencing) সম্পন্ন করা হয়েছে।
১০. এফএও এর গ্লোবাল প্লান অফ একশন’২০২৩ এ ব্রি জার্মপ্লাজমএর সকল তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
১১. এফএও এর ইন্টারন্যাশনাল ট্রীটি অন প্লান্ট জেনেটিক রিসোর্সেস ফর ফুড এন্ড এগ্রিকালচার এর ১৭ নং আর্টিক্যাল অনুসারে গ্লোবাল ইনফরমেশন সিস্টেমে ১০৭টি জার্মপ্লাজম ডিওআই নম্বর সহযোগে রেজিস্ট্রেশন করে ব্রি জীনব্যংক সমগ্র বাংলাদেশে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে।
১২. জিআরএস বিভাগের মাধ্যমে একটি টেকসই ধানবীজ নেট ওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে যা বিভিন্ন বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ভিত্তি বীজ উৎপাদন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখছে।
১৩. প্রতিবছর নিউক্লিয়াস বীজসহ ১১০টি ব্রি উদ্ভাবিত (ব্রি ধান১০৮ পর্যন্ত) এবং ২২টি ব্রি প্রস্তাবিত ধানের জাত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
১৪. প্রতিবছর প্রায় একশত পঞ্চাশ টনের অধিক ব্রি উদ্ভাবিত জাত সমূহের ব্রিডার বীজ বিএডিসিসহ প্রায় ১০০০ সীডনেট পার্টনারকে সরবরাহ করা হয়। আর এভাবেই এই বিভাগ সরাসরি ক্ষুধা মুক্তি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় ভুমিকা রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে সহায়তা করছে।
১৫. জিআরএস বিভাগের বিজ্ঞানীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০২০ সালের নভেম্বরে Department of Patents, Designs and Trade Marks হতে বাংলাদেশের কালিজিরা এবং কাটারিভোগ ধান যথাক্রমে বাংলাদেশ কালিজিরা এবং দিনাজপুর কাটারিভোগ নামে বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পন্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
৪) Grain Quality and Nutrition(GQN) Division
BRRI cereal chemists regularly evaluate the physical and chemical properties of rice in terms of taste, cooking quality, milling outturn, aroma, protein and amylose contents, etc, helping plant breeders develop varieties with desirable grain quality.
৫) হাইব্রিড রাইস বিভাগ
১। হাইব্রিড রাইস বিভাগ এই পর্যন্ত ৮টি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে যা প্রচলিত উফশী জাতের চেয়ে ১৫-২০ ভাগ ফলন বেশী দিতে সক্ষম।
২। এর মধ্যে ৪টি বোরো মওসুমের, ২টি আমন মওসুমের এবং ১টি আউশ মওসুমের।
৩। অবমুক্ত জাতসমূহের সঠিক বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
৪। দেশীয় আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে সক্ষম এ রকম ৬০টি মাতৃ সারি উদ্ভাবন যা আমন, বোরো ও আউশ মওসুমে ব্যবহার করা যায়।
৫। ব্রি উদ্ভাবিত অগ্রগামী উফশী সারি থেকে ১০টি পিতৃ সারি সনাক্তকরণ।
৬। পিতৃ সারি পিতৃ সারি সংকরায়নের মাধ্যমে ৪০টি নতুন গুনাবলী সম্পন্ন পিতৃ সারি উদ্ভাবন।
৭। উর্বরতা সংরক্ষক সারি ও উর্বরতা সংরক্ষক সারির মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে ৩৫টি নতুন গুনাবলী সম্পন্ন উর্বরতা সংরক্ষক সারি উদ্ভাবন।
৮। ব্রি অবমুক্তকৃত হাইব্রিড ধানের জাতসমূহের বীজ উৎপাদনের জন্য সঠিক সারির অনুপাত ও জিএ৩ ব্যবহারের পরিমান নির্ধারণ।
৯। প্রতি বছর বোরো মওসুমে ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড ধান জাতের প্রায় ১০ টন হাইব্রিড ও পিতৃ ওমাতৃ সারির বীজ বিনামূল্যে সরকারী, বেসরকারী ও কৃষকদের মাঝে বিতরন।
১০। কৃষি সম্প্রসারণবিদ, এনজিও কর্মকর্তা ও কৃষকদেরকে হাইব্রিড ধানের চাষাবাদ ও বীজ উৎপাদন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান।
১১। বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদন এবং অবমুক্ত জাতসমূহের লিফলেট ও বুলেটিন প্রকাশ।
Crop-Soil-Water Management
০১) কৃষিতত্ত্ব বিভাগ
১. শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে দিতে হবে। তবে, দীর্ঘসময় ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলে সেখানে দিনে এবং রাতে সবসময় পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে রাখতে হবে এবং বীজতলার উভয়পার্শ্বে পলিথিন আংশিক খোলা রাখতে হবে।
২. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অপেক্ষাকৃত ভালো জমি হতে প্রতি গোছা থেকে ২-৩টি কুশি আলাদা করে নতুন জমিতে রোপণ করা যায়। এভাবে মূল জমির সমপরিমাণ বা তার চেয়ে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা যায় এবং ফলনও মূল জমির মত পাওয়া যায়।
৩. চারা রোপণ যন্ত্রে (মেকানিক্যাল রাইস ট্রান্সপ্লান্টার) ব্যবহারের জন্য ট্রেতে উন্নতমানের ধানের চারা তৈরির লক্ষ্যে বোরো মৌসুমে ট্রে মিডিয়া হিসেবে ২৫% ধানের কুঁড়া + ৭৫% দোআঁশ মাটি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর চারা উৎপাদন করা যায়।
৪. বোরো মৌসুমে ২০-২৫ দিন এবং আমন মৌসুমে ১৫-১৬ দিন বয়সের, ১২-১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ধানের চারা যান্ত্রিক রোপণ যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
৫. বন্যাকবলিত অবস্থায় ভাসমান বীজতলায় চারা উৎপাদন একটি অন্যতম বিকল্প পদ্ধতি। বাঁশের/কলার ভেলায় ২-৩ সেন্টিমিটার মাটির আস্তরের উপরে বীজ বপন করে ২০-২৫ দিনের মধ্যে মানসম্পন্ন ধানের চারা তৈরি করা যায়।
৬. আমন মৌসুমের চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত সময় হলো মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়। বন্যা পরবর্তী সময়ে আলোক সংবেদনশীল জাত সমূহ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। বোরো মৌসুমে, ধানের চারা রোপণ জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা প্রয়োজন, তবে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের শীতপ্রবণ উত্তরাঞ্চলে ধানের চারা রোপণ করেও ভালো ফলন পাওয়া যায়।
৭. বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে স্বল্প জীবনকালীন ধানের জাত (যেমনঃ ব্রি ধান৩৩) আগাম রোপণ (জুলাই মাসে) করে সঠিক শস্য বাবস্থাপনার মাধ্যমে মঙ্গা সমস্যার সমাধান করা হয়। এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখে এবং কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডঃ এম এ মজিদ ২০১৮ সালে জাতীয় স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।
৮. কৃষিতত্ত্ব বিভাগ ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম ধানের জমিতে গন্ধকের ঘাটতি জনিত সমস্যাটি দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে চিহ্নিত করে। জমির গন্ধকের ঘাটতি পূরণের সহজলভ্য সমাধান হিসাবে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে জিপসাম সার ব্যবহারের সুপারিশ করে।
৯. ব্রি ধান২৯ ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে (DWSR) পর্যায়ক্রমে শুকানো ও ভিজা পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করে এবং হেক্টর প্রতি ১৫০-১৬০ কেজি নাইট্রোজেন প্রয়োগ করে সর্বাধিক ফলন (৭.১-৭.৪ টন/হে.) পাওয়া যায়।
১০. ধানের উচ্চ ফলন নিশ্চিতের জন্য তাজা মুরগির বিষ্ঠার সাথে মৃত্তিকা পরীক্ষার মাধ্যমে বাকি রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যায়। আমন এবং বোরো মওসুমে যথাক্রমে হেক্টর প্রতি ২.৫ এবং ৩.৫ টন তাজা মুরগির বিষ্ঠা এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়।
১১. সুষম সার ব্যবহারের জন্য বোরো এবং আমন মৌসুমে পর্যায়ক্রমে প্রায় ২.৪ গ্রাম ওজনের ২টি এবং ৩.৪ গ্রাম ওজনের ১ টি এনপিকে ব্রিকেট প্রয়োগে ধানের ফলন এবং সার ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
১২. বন্যা সহনশীল জাতসমূহ বিশেষকরে ব্রি ধান৫১ এবং ব্রি ধান৫২ বন্যার পানি সরে যাওয়ার ৫-১৫ দিন পর হেক্টর প্রতি ৩০ কেজি নাইট্রোজেন এবং ৩০ কেজি পটাশিয়াম সার প্রয়োগ করলে রংপুর অঞ্চলে প্রতি হেক্টর জমিতে ১.০-১.৫ টন অধিক ফলন দেয়।
১৩. বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে পিট মাটিতে ধান চাষের জন্য টিএসপি সহ অন্যান্য সারের প্রয়োজনীয়তার মাত্রা মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে নির্ধারণ করলে ধানের অধিক ফলন নিশ্চিত করা যায়।
১৪. আমন মৌসুমে ধানের জমিতে আগাছার ক্রান্তিক ঘনত্ব (Critical density) নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে আগাছার শুকনো পদার্থের ওজন প্রতি বর্গমিটারে ১১.৯২ গ্রাম বা প্রতি বর্গমিটারে ৯টি আগাছা (ঘাস, সেজ বা প্রশস্ত পাতা বিশিষ্ট) হতে পারে।
১৫. ধানের আগাছা দমনের লক্ষ্যে আগাছানাশকের কার্যকারিতা ও সঠিক মাত্রা নির্ধারণের জন্য কৃষিতত্ত্ব বিভাগ বেশ কিছু আগাছানাশকের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রি-ইমারজেন্স হিসাবে মেফিনিসেট + বেনসালফুরান মিথাইল, বেনসালফুরান মিথাইল + এসিটাক্লোর; এবং পোস্ট-ইমারজেন্স হিসাবে পাইরাজোসালফুরান ইথাইল, ফেনাক্সোলাম, বিসপাইরিব্যাক সোডিয়াম এসসি অত্যন্ত কার্যকারী। অপরদিকে, উঁচু জমিতে ধানের আগাছা নিয়ন্ত্রণের পেনডিমিথালিন, অক্সাডাআরজিল, অক্সাডায়াজোন আগাছানাশক অত্যন্ত কার্যকর।
১৬. এক ফসলী জমি চাষের পূর্বে জলজ আগাছা পরিস্কারের জন্য আগাছানাশক হিসাবে প্যারাকুয়েট, গ্লাইফোসেট প্রয়োগ অত্যন্ত কার্যকর ও অর্থ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি।
১৭. বাংলাদেশের দক্ষিণ জোয়ার ভাঁটা অঞ্চলের স্থানীয় জাতের ধান চাষের কাঁইচথোড় পর্যায়ে এক বার গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে হেক্টর প্রতি ০.৫ টন অধিক ফলন পাওয়া যায়।
১৮. উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় বোরো মওসুমে ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৬৭ চাষাবাদে গোছা প্রতি ৩-৪ টি চারা ২০ সেমি লাইনে ২০ সেমি দূরে দূরে রোপণ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়।
১৯. বোরো মৌসুমে চারা রোপণ যন্ত্র ব্যবহার করে দীর্ঘ জীবনকাল বিশিষ্ট ধান চাষে হেক্টর প্রতি ৩০০ কেজি ইউরিয়া সার চার কিস্তিতে (রোপণের ২০, ৪০, ৬০, ৮০ দিন পর) প্রয়োগ করে ধানের ৬.৫-৭.৩ টন ফলন নিশ্চিত করা যায়।
২০. রংপুর অঞ্চলে খরা সহনশীল স্বল্প জীবনকালীন আমন ধান চাষের জন্য জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ২৫ দিন বয়সের চারা ২০ × ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ এবং যেকোনো একটি প্রি-ইমারজেন্স বা পোস্ট-ইমারজেন্স অথবা ক্ষেত্রবিশেষে উভয় আগাছানাশক প্রয়োগ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায়।
২১. আউশ ও আমন মওসুমে ৩০-৪০ দিন এবং বোরো মওসুমে ৪০-৫০ দিন জমি আগাছামুক্ত রাখা না হলে যে ক্ষতি হয় পরে সারা মওসুমে ঐ জমি আগাছামুক্ত রেখেও তা পূরণ করা যায় না।
২২. রোপা ধানে কমপক্ষে দু-বার আগাছা দমন করতে হয়। প্রথমবার ধান লাগানোর ১৫ দিন পর এবং পরের বার ৩০-৩৫ দিন পর। জমি শুকিয়ে গেলে বা সেচ দিতে দেরি হলে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যায়। বোরো মওসুমে ৪৫-৫০ দিন পর আরেকটি হাত নিড়ানির প্রয়োজন পড়ে।
২৩. বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে রবি- পাট- সাথি ফসল হিসেবে বোনা আমন চাষে স্থানীয় আমন জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৫৬ এবং ব্রি ধান৬৬ হেক্টর প্রতি প্রায় ১.৮-২.২ টন অধিক ফলন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পাট কাটার সময় আমন ধানে সঠিক ভাবে সারের উপরি প্রয়োগ এবং আগাছা বাছাই করা প্রয়োজন।
২৪. ধানক্ষেতে সমন্বিত ধান ও হাঁস চাষাবাদ ধানের আগাছা দমনে একটি লাগসই প্রযুক্তি। এই পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপনের দুই সপ্তাহ পর থেকে সেই জমিতে ২০-৩০ দিন বয়সী হাঁস ছেড়ে দিতে হবে, যা ধান ক্ষেতে অন্যান্য আগাছা খেয়ে ফেলে। এছাড়াও, হাঁসের বিষ্ঠা মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং রাসায়নিক সার কম পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়।
২৫. রংপুর অঞ্চলের মাঝারি উঁচু জমিতে প্রচলিত আলু-ভুট্টা-রোপা আমন/ বোরো-পতিত-রোপা আমন শস্যক্রমের পরিবর্তে আলু-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন শস্যক্রম অনুশীলন করলে কৃষকগন অধিক লাভবান হবেন এবং জমির উর্বরতা ঠিক থাকে।
২৬. চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাসে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার গবেষণাটি ব্রি ফার্ম গাজীপুরে চলমান আছে। লিগিউম ফসল মুগ থাকায় এবং উপযুক্ত কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োগের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে। বছরে ৪টি ফসল করার পরও মাটির উবর্রতা কমে নাই; বরং কয়েকটি পুষ্টি উপাদান বেড়েছে। এছাড়া মাটির উপকারী অনুজীব যেমন নাইট্রোজেন ফিক্সিং ও ফসফেট সলিউবল ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক পপুলেশন বোরো-আমন ক্রপিং প্যাটার্ন-এর তুলনায় চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাসে প্রায় ৪-৫ গুন বেড়েছে।
০২) মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ
১. ব্রি উদ্ভাবিত ধানের বিভিন্ন জাতের ফলন দেয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী সারের মাত্রা সুপারিশ।
২. কিস্তি ভিত্তিতে দানাদার ইউরিয়া সারের প্রয়োগ।
৩. ক্লোরোফিল মিটার (SPAD meter) ও লিফ কালার চার্ট (LCC) ব্যবহার করে কৃষকের চেয়ে কম পরিমাণ নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করে ধানের অধিক ফলন অর্জন।
৪. সেচকৃত ধানের জমিতে গন্ধক ও দস্তার অভাবজনিত সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এই সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত সারের মাত্রা নির্ধারণ।
৫. ধৈঞ্চা-হালকা বুনটের মাটির জন্য নাইট্রোজেন সারের বিকল্প উৎস হিসেবে সুপারিশ।
৬. এ্যাজোলাঃ ধানী জমিতে জৈব ও নাইট্রোজেন সারের পরিপূরক ।
৭. ধান চাষে মুরগির বিষ্ঠাকে জৈব পদার্থ এবং উদ্ভিদের খাদ্যোপাদানের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে চিহ্নিতকরণ। মুরগির বিষ্ঠাকে টিএসপি সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য সুপারিশ।
৮. কৃষকের জন্য মাটির স্বাস্থ্য কার্ড তৈরী।
৯. রাসায়নিক সার ও জৈবসার (ফসলের অবশিষ্টাংশ/গোবর/সবুজ সার, ইত্যাদি) ব্যবহারের মাধ্যমে শস্যক্রম- ভিত্তিক সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
১০. বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের (AEZ) উপযোগী ১৪টি ধান ভিত্তিক শস্যক্রমের জন্য সার ব্যবস্থাপনার সুপারিশ।
১১. সবের্বাচ্চ ফলন পাওয়ার জন্য এলাকা ভিত্তিক ধান-ধান এবং ধান-গম শস্যক্রমে উদ্ভিদ ও মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার প্রয়োগের সুপারিশ।
১২. জোঁয়ার ভাটা প্রবণ এলাকায় ধান চাষে নাইট্রোজেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও অপচয় কমাতে গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৩. ড্রাম সীডার পদ্ধতিতে ধান চাষে গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহার প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৪. আধুনিক ধান উৎপাদনে অধিক মাত্রায় পটাশ সার ব্যবহারের সুপারিশ।
১৫. ধান চাষে পটাশ সারের বিকল্প হিসেবে ধানের খড় ব্যবহারের সুপারিশ।
১৬. লবণাক্ত জমিতে পটাশিয়াম সার ব্যবহার করে ধান ফসল উৎপাদন প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৭. লবণাক্ত এলাকায় ধান চাষে সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৮. লবণাক্ত এলাকায় ডিবলিং পদ্ধতিতে আউশ ধান চাষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন।
১৯. এডাব্লিউডি (AWD) পদ্ধতিতে ধান চাষ, ধান গাছে আর্সেনিকের মাত্রা কমায়।
২০. ব্রি ধান৪৭ এবং ব্রি ধান৫০ আর্সেনিক সহনশীল জাত হিসেবে চিহ্নিত করণ।
২১. মিহি ও মধ্যম মিহি বুনটের (Fine and medium fine textured) মাটিকে কাদাময় না করে ন্যুনতম চাষ দিয়ে ধান উৎপাদনের পদ্ধতির উদ্ভাবন।
২২. ব্রি, বায়োঅর্গানিক সার হেক্টর প্রতি ২ টন ব্যবহারে পুরো টিএসপি ও শতকরা ৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সার সাশ্রয় করা ছাড়াও ধানের ভাল ফলন ও মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
২৩. মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে বাসায়নিক সারের সাথে ১ টন/হেক্টর ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারে ধানের ভাল ফলন পাওয়ার পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।
২৪. এডাব্লিউডি (AWD) পদ্ধতিতে ধান চাষে শতকরা ৩৫ ভাগ বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানো যায়। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে ধান চাষ অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক।
২৫. রাসায়নিক সারের সাথে ০.৫ টন/হেক্টর ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারে অধিকমাত্রার ভার্মিকম্পোস্ট (২ টন/হেক্টর) ব্যবহারের চেয়ে তুলনামূলকভাবে মিথেন নির্গমণ কম হয়।
২৬. চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাসে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার গবেষণাটি ব্রি ফার্ম গাজীপুরে চলমান আছে। লিগিউম ফসল মুগ থাকায় এবং উপযুক্ত কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োগের কারণে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে। বছরে ৪টি ফসল করার পরও মাটির উবর্রতা কমে নাই; বরং কয়েকটি পুষ্টি উপাদান বেড়েছে। এছাড়া মাটির উপকারী অনুজীব যেমন নাইট্রোজেন ফিক্সিং ও ফসফেট সলিউবল ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক পপুলেশন বোরো-আমন ক্রপিং প্যাটার্ন-এর তুলনায় চার ফসলভিত্তিক শস্য বিন্যাসে প্রায় ৪-৫ গুন বেড়েছে।
৩) সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ
১। আমন ধান উৎপাদনে সম্পূরক সেচ
আমন মৌসুমে সাধারনতঃ অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে বৃষ্টিপাত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ৬ সেন্টিমিটার গভীরতায় ১-২টি সম্পূরক সেচ দিলে বৃষ্টি নির্ভর উফশী আমন ধানের উৎপাদন প্রায় ৪০%-৪৫% বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত খরা মোকাবেলায় ২/৩ টা সম্পূরক সেচ দিলে হেক্টর প্রতি প্রায় ১ টন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া চারা রোপনের সময় বৃষ্টিপাত না হলে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে সময়মত চারা রোপন করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২৫ জুলাই এর পরে চারা রোপন করলে ফলন কমে যায়। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমন ধানের সম্পূরক সেচের আয়-ব্যয় অনুপাত ৩:১।
২। ফার্ম রিজারভার তৈরী করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে খরা মোকাবেলা
কম বৃষ্টিপাত সম্পন্ন এলাকায় আমন ধানের জমির কোনায় ৫% এলাকায় ২ মিটার গভীর করে ফার্ম রিজারভার তৈরী করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে খরার সময় সম্পূরক সেচ দিয়ে ধানের আশানুরপ ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া রবি ফসলও সেচের মাধ্যমে করা সম্ভব হয় এবং কিছু মাছও চাষ করা যায়। ফলে ফার্ম রিজার্ভার মাধ্যমে আমন ধান উৎপাদনের আয়- ব্যয় অনুপাত দাড়ায় প্রায় ২:১।
৩। জমির আইল রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ
বৃষ্টি হওয়ার পর বৃষ্টিপাতের উল্লেখযোগ্য অংশ অপচয় হয় পানি চুয়ানো ও ভূ-গর্ভে চলে যাওয়া (Seepage and Percolation), আইলের উপরিপ্রবাহ (Overflow) ও পার্শ্বপ্রবাহ (Lateral flow) এর মাধ্যমে। ফলে ফসলের জন্য কার্যকর (Effective) বৃষ্টিপাতের পরিমান দাড়ায় শতকরা ৬০ ভাগে। অথচ, আইল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যকর বৃষ্টিপাতের পরিমান শতকরা ৮০ ভাগে উন্নিত করা সম্ভব। জমিতে যত বেশী বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায় তত বেশী দিন পানি জমিতে অবস্থান করে এবং তত কম পানির অভাব (Water stress) হবে। ফলস্বরুপ, হালকা বা মাঝারি ধরনের খরা থেকে ফসলকে রক্ষা করতে সম্ভব হয়। তাই, বর্ষা মৌসুমে সাধারণ বৃষ্টিপাত সম্পন্ন এলাকায় জমির আইল ১৫ সেঃমিঃ উচ্চতায় রক্ষনাবেক্ষন করে ৮০ থেকে ৯০% বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে আমন ধানের কাংক্ষিত ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে আয় ব্যয়ের হিসাব দাড়ায় ১.২৫:১।
৪। সেচের পানি সাশ্রয়ের মাধ্যমে ধান উৎপাদন
ধান চাষে সর্বদা দাড়ানো পানির প্রয়োজন নেই। ধান ক্ষেতে একবার ৫ থেকে ৭ সেঃ মিঃ সেচ দেয়ার পর জমিতে দাঁড়ানো পানি শেষ হবার ৩ দিন পর পুনরায় সেচ দিলে ২৫% পানির অপচয় রোধ করা যায়।
৫। কমপ্যাক্ট সেচ নালা ব্যবহার
অগভীর নলকুপ এলকায় সনাতন পদ্ধতিতে তৈরী মাটির সেচ নালার তুলনায় কমপ্যাক্ট সেচ নালার মাধ্যমে সেচ দিলে প্রায় ২৫-৩০% পানির অপচয় রোধ করা যায়। এ ছাড়া নালার ভিতরে দুই পাশে কাদা মাটির সাথে তুশ ও গোবর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে অধিক কার্যকর হয়। এ পদ্ধতিতে আয় ব্যয়ের হিসাব দাড়ায় ১.৫:১।
৬। হুজ/প্লাস্টিক পাইপ বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেচ প্রদান
অগভীর নলকুপে হুজ/প্লাস্টিক পাইপ ব্যবহার করে প্রায় ২০% সেচ এলাকা বৃদ্ধি করা যায় এবং সেচের পানির ৮০%-৯০% পরিবহন অপচয় রোধ করা যায়। বেশী পানি ও দূরবর্তী স্থানে পরিবহনের জন্যে হুজ পাইপের টুকরো সংযোজনের ক্ষেত্রে ক্ল্যাম্প পদ্ধতিটি সাধারণ ওভারলেপিং পদ্ধতির চাইতে বেশী উপযোগী। এই পদ্ধতিতে আয় ব্যয়ের হিসাব দাড়ায় ২:১।
৭। পিভিসি পাইপ বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেচ প্রদান
গভীর নলকুপের পিভিসি পাইপ ব্যবহার করে ৪০%-৫০% সেচ এলাকার বৃদ্ধি করা যায় এবং সেচের পানির প্রায় ৯৯% পরিবহন অপচয়রোধ করা যায়। স্বল্প উঁচু ও নীচু জমিতে সেচ প্রদানের জন্য পদ্ধতিটি অত্যন্ত উপযোগী।
৮। অগভীর নলকুপে সেচের সুবিধার্থে চেক ভাল্ব ব্যবহার
অগভীর নলকুপ চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবার পাম্প চালানোর সময় হস্তচালিত পাম্প দ্বারা ভূগর্ভস্থ পানিকে ডেলিভারী পাইপের মুখ পযন্ত উঠাতে হয় যাকে প্রাইমিং বলে। এটি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ (২-৩ জন লোক লাগে)। সেচ কাজে অগভীর নলকুপ চালনাকে সহজসাধ্য করা ও বিতরণ ব্যবস্থায় প্লাস্টিক পাইপের ব্যবহার সহজতর করার জন্য শ্রমসাশ্রয়ী চেক ভাল্ব উদ্ভাবন করা হয়েছে। অগভীর নলকূপের পাম্পের আগে সাকশন পাইপের সাথে চেক ভাল্বটি স্থাপন করা হয়। পাম্পটি চালু অবস্থায় পূর্বের মতই পানি সরবরাহ করে মূখ পযন্ত পানি ধরে রাখে। ফলে পূনরায় পাম্পটি চালু করলেই পানি সরবরাহ শুরু হয়ে যায়।
৯। লবনাক্ত এলাকায় ভূপৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহার করে বোরো ধান উৎপাদন
নদীর অলবনাক্ত জোয়ারের পানি বাঁধ ও স্লুইচ গেটের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে মধ্য ফেব্রুয়ারি হতে মার্চের শেষ পর্যন্ত বোরো চাষাবাদে সেচ প্রদান করে গড়ে ৪ টন/হেঃ ধান উৎপাদন করা যায়। অন্যথায়, এ সমস্ত এলাকার সেচের পানির অভাবে বোরো মৌসুমে জমি পতিত থাকে।
১০। শুকনো মৌসুমে লবনাক্ততা হ্রাসের মাধ্যমে রবি শস্য উৎপাদন
উপকূলীয় এলাকায় শুকনো মৌসুমে মাটির লবনাক্ততা শস্য উৎপাদনের প্রধান বাধা। মাটি ব্যবস্থাপনা যেমন আমন কাটার পর পরই জমি চাষ এবং উঁচু বেড তৈরীর মাধ্যমে মাটির ৪০%-৬০% লবনাক্ততা হ্রাস করা সম্ভব। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ফেব্রুয়ারি হতে মে পর্যন্ত রবি শস্য যেমন, তিল, মুগ, সূর্যমুখী ও ভুট্টা চাষ করা যায়।
১১। AWD পানি সাশ্রয়ী পদ্ধতি প্রয়োগে বোরো ধান চাষ
২৫ সেঃমিঃ দৈর্ঘ্য এবং ১০ সেঃমিঃ ব্যাসের, ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ ১৫ সেঃমিঃ মাটির নিচে এবং ১০সেঃমিঃ মাটির উপরে বসাতে হবে। একবার সেচ দেওয়ার পর উক্ত পাইপের পানির স্তর ১৫ সেঃ মিঃ নিচে গেলে আবার সেচ দিতে হয়। এই ভাবে Alternative drying and wetting (AWD) পদ্ধতিতে সেচ দিলে ৫-৬ টি সেচ কম লাগে এবং ২০-৩০% পানি সাশ্রয়ী হয়। তাতে বোরো ধান চাষে তেল খরচ ও শ্রম খরচ কম লাগে। ফলে, হেক্টরপ্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা খরচ কম লাগে।
১২। বরিশাল অঞ্চলের বৃহৎ নদীপ্রবাহসমূহে স্বাদু-লবনাক্ত পানির সীমারেখা নির্ধারণ
জোয়ার-ভাটাপ্রবণ বরিশাল অঞ্চলের চারটি বড় নদীপ্রবাহ, যথাক্রমে, বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া-এর বিভিন্ন স্থানে পানির লবনাক্ততা শুষ্ক মওসুমে মার্চ-জুন পর্যন্ত নিয়মিত পরিমাপ করা হয়েছে। নদীর পানি প্রবাহে বিদ্যমান লবনাক্ততার পরিমান ১ ডিএস/মি-এর কম হলে তা স্বাদু পানির সমমান এবং বেশী হলে তা লবনাক্ত পানির সমমান ধরে বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া নদীর উজান থেকে উপকূলের নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত স্বাদু-লবনাক্ত পানির সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে, স্বাদু-লবনাক্ত পানির সীমারেখা বলেশ্বর, বিষখালী, বুড়িশ্বর এবং তেতুলিয়া নদীর মোহনা থেকে যথাক্রমে ৩৪ কিমি, ২৪ কিমি, ১৮ কিমি এবং ১৭ কিমি উজানের দিকে বিস্তৃত। নদীর স্বাদু পানি কৃষি জমিতে সেচের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এই পানি ব্যবহার করে বরিশাল অঞ্চলের আমন মওসুমের পরে যেসব জমি শুষ্ক মওসুমে পতিত পরে থাকে তা চাষের আওতায় আনা যায়। সেচ উপযোগী স্বাদু পানি ব্যবহার করে কৃষকেরা এক ফসলী জমিতে দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।
১৩। জোয়ার-ভাটা প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে জলাবদ্ধ ধানক্ষেতে সবজী চাষ
৫০-৭৫ সেমি ব্যাসের পাটের বস্তা ৫০ গ্রাম টিএসপি, ৩০ গ্রাম এমওপি এবং ১ কেজি সরিষা কেক সহযোগে মাটি ভর্তি করা হয় এবং ধানের জমিতে ৩ মিটার দূরত্বে সারিতে স্থাপন করা হয়। মাটি ভর্তি বস্তার মুখ জোয়ারের পানি উপরিভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০ সেমি উপরে থাকতে হবে। জনপ্রিয় এবং উচ্চমূল্যের বিভিন্ন সবজী, যেমন, করলা, ঝিঙ্গা, শসা, কুমড়া ইত্যাদি এই বস্তায় চাষ করা যায়। সবজী গাছ বেড়ে উঠার জন্য বাশের খুটিযুক্ত জালের মাচা ব্যবহার করা যেতে পারে। ধানক্ষেতে পাটের বস্তায় সবজীচাষ কৃষকের আয় বৃদ্ধি করে, বেকারত্ব হ্রাস করে এবং সবজীর অব্যবহৃত অংশ (খোসা) জমির কার্বনের পরিমান সমৃদ্ধ করে।
১৪। ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের মাধ্যমে চালিত ভূ-উপরিস্থ সেচ পাম্পের বহুমুখী ব্যবহার
ভ্রাম্যমান সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শুষ্ক মওসুমে ফসল উৎপাদনের জন্য ভূ-উপরিস্থ সেচ কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া প্যানেলটি দ্বারা ১.৫ কি.ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ওপেন ড্রাম থ্রেসার চালানো যায় যা দ্বারা দুজন শ্রমিক প্রতি ঘন্টায় ২৫০-৩৫০ কেজি ধান মাড়াই করতে পারে এবং ৩-৪টি বসতবাড়িতে ব্যবহার উপযোগী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
৪) উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের সার্বিক অর্জনসমূহকে ৪টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে
(১) অগ্রগামী কৌলিক সারির শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যায়নের মাধ্যমে পীড়ন সহনশীল জাত উন্নয়নে সহায়তা
(২)ভবিষ্যতে জাত উন্নয়নের নিমিত্তে নতুন ডোনার প্যারেন্ট সনাক্তকরণ এবং পীড়ন সহনশীলতার কৌশল জানার জন্য ধানের জার্মপ্লাজমসমূহের বৈশিষ্ট্যায়ন
(৩) কৃষকদের জন্য ফসল ব্যবস্থাপনা সমপর্কিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন
(৪) ধানের শারীর তাত্ত্বিক তথ্য বা জ্ঞান উদ্ভাবন করা।
(১) অগ্রগামি কৌলিক সারির শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যায়নের মাধ্যমে পীড়ন সহনশীল জাত উন্নয়নে সহায়তা-
(ক) অনুমোদিত অবমুক্ত পীড়ন সহনশীল জাতসমূহঃ-
অগ্রগামী কৌলিক সারি সনাক্তকরণ
|
পীড়ন পরিবেশ
|
পীড়ন মাত্রা
|
বৈশিষ্ট্যায়নের বছর
|
অবমুক্ত জাত সমূহের নাম
|
অবমুক্তির বছর
|
মন্তব্য
|
বিআর৬৮৪-৩বি-১২
|
খরা
|
৩সপ্তাহ
|
২০১৬-২০১৭
|
ব্রিধান৮৩
|
2017
|
চারা অবস্থায় খরা সহনশীল।
|
আই আর ৭৭০৯২-২আর-বি-১০
|
লবণাক্ততা ও ও জলমগ্নতা
|
৬-৯ ডিএস/ মিটার লবণাক্ততা ও ১২ দিন
৭০ সেমি জলমগ্নতা
|
২০১৫-২০১৬
|
ব্রিধান৭৮
|
২০১৬
|
জোয়ার ভাটা অঞ্চলের জন্য উপযোগী
|
আইআর৭৮৭৬১-বি-এসএটিবি১-২৮-৩-২৪
|
লবণাক্ততা
|
৮ডিএস/ মিটার
|
২০১৪-১৫
|
ব্রিধান৭৩
|
২০১৫
|
আমন মৌসুমে সম্পূর্ন জীবনকাল ৮ডিএস/ মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল।
|
আই আর ৮২৫৮৯-বি-বি-৮৪-৩
|
খরা
|
৩সপ্তাহ
|
২০১৪-১৫
|
ব্রিধান৭১
|
২০১৫
|
প্রজনন পর্যায়ে খরা সহনশীল।
|
বিআর৭১০০-৬-৬
|
লবণাক্ততা
|
৮ডিএস/ মিটার
|
২০১৩-১৪
|
ব্রিধান৬৭
|
২০১৪
|
বেরো মৌসুমে প্রজনন পর্যায়ে৮ডিএস/ মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল।
|
আইআর৮২৬৩৫-বি-বি-৭৫-২
|
খরা
|
৩সপ্তাহ
|
২০১২-১৩
|
ব্রিধান৬৬
|
২০১৪
|
প্রজনন পর্যায়ে ৩সপ্তাহ পর্যন্ত খরা সহনশীল।
|
আইআর৭৪৩৭১-৭০-১-১
|
খরা
|
১৪-২১দিন
|
২০০৯-১০
|
ব্রিধান৫৬
|
২০১১
|
প্রজনন পর্যায়ে ১৪-২১ দিন পর্যন্ত খরা সহনশীল।
|
বিআর৭৮৭৩-৫(NIL)-৫১-এইচআর৬
|
খরা
|
১০-১৪দিন
|
২০০৯-১০
|
ব্রিধান৫৭
|
২০১১
|
স্বল্প জীবনকালের জন্য খরা পরিহার করতে পারে।
|
বিআর৫৭৭৮-১৫৬-১-৩-এইচআর১৪
|
লবণাক্ততা
|
৮-১০ ডিএস/ মিটার
|
২০০৭-০৮
|
ব্রিধান৫৩
|
২০১০
|
জীবনকালের শেষ পর্যায়ে লবণাক্ততা সহনশীল।
|
বিআর৫৯৯৯-৮২-৩-২- এইচআর১
|
লবণাক্ততা
|
৮-১০ ডিএস/ মিটার
|
২০০৭-০৮
|
ব্রিধান৫৪
|
২০১০
|
জীবনকালের শেষ পর্যায়ে লবণাক্ততা সহনশীল।
|
আইআর৬৩৩০৭-৪বি-৪-৩
|
লবণাক্ততা
|
৬ডিএস/ মিটারসম্পুর্নজীবনকাল
|
২০০৫-০৬
|
ব্রিধান৪৭
|
২০০৭
|
দক্ষিনাঞ্চলে বিশেষকরে বরিশালে এটি বেশ জনপ্রিয় ধানের জাত।
|
বিআর৫৩৩১-৯৩-২-৮-৩
|
লবণাক্ততা
|
৮-১০ডিএস/ মিটার
|
২০০৩
|
ব্রিধান৪০
|
২০০৩
|
আমন মৌসুমে জীবনকালের শেষ পর্যায়ে লবণাক্ততা সহনশীল।
|
(খ) প্রস্তাবিত নতুন জাত উদ্ভাবনে বৈশিষ্ট্যায়িত কৌলিক সারিসমূহঃ
কৌলিকসারিএবংজার্মপ্লাজমসনাক্তকরণ
|
পীড়ন পরিবেশ
|
পীড়ন মাত্রা
|
বৈশিষ্ট্যায়নের বছর
|
অবমুক্ত জাত সমূহের নাম
|
অবমুক্তির বছর
|
মন্তব্য
|
আইআর৭৮৭৬১-বি-এসএটিবি১-২৮-৩-২৬
আইআর৭৮৭৬১-বি-এসএটিবি১-২৮-৬এবং
আইআর৭৩০৫৫-৮-১-১-৩
|
লবণাক্ততা
|
৯ ডিএস/ মিটার
|
২০১৪-১৫
|
প্রস্তাবিত জাত
|
আসন্ন
|
আমন মৌসুমে সম্পূর্ন জীবনকাল ৯ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল
|
আইআর৫৯৪১৮-৭বি-২১-৩
|
লবণাক্ততা
|
৮ ডিএস/ মিটার
|
২০১৩-১৪
|
প্রস্তাবিতজাত
|
আসন্ন
|
বোরো মৌসুমে প্রজনন পর্যায়ে ৮ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল।
|
আইআর৭৭৪৯-৩১-২-১-৩-১
|
ঠান্ডা
|
চারা অবস্থায় ১০-১৩ ডিগ্রী সে. এবং প্রজনন পর্যায়ে ১৫ ডিগ্রী সে.
|
২০১২-১৪
|
প্রস্তাবিতজাত
|
আসন্ন
|
দক্ষিনাঞ্চলের জন্য ঠান্ডা সহনশীল
|
আইআর২২৬৬-৪২-৬-২
|
ঠান্ডা
|
চারা অবস্থায়
|
২০১২-১৪
|
প্রস্তাবিতজাত
|
আসন্ন
|
দক্ষিনাঞ্চলের জন্য ঠান্ডা সহনশীল
|
টিপি১৬১৯৯
|
ঠান্ডা
|
এই সারিটি আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষা পর্যায়েআছে।
|
টিপি৭৫৯৪
|
ঠান্ডা
|
এই সারিটি আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষা পর্যায়েআছে।
|
উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল জাত উদ্ভাবনের জন্য ব্রিধান২৮ ও ব্রিধান২৯এ দুইটি স্পাইকলেট ফারটিলিটি QTL (qSF 4.1 এবং qSF 4.2) ইন্ট্রোগ্রেস করা হয়েছে
|
তাপ
|
এই সারিগুলো বর্তমানে Marker Assisted Selection এর মাধ্যমে BC3 পর্যায়ে আছে।
|
(২) ভবিষ্যতে জাত উন্নয়নের নিমিত্তে নতুন ডোনার প্যারেন্ট সনাক্তকরন এবং পীড়ন সহনশীলতার কৌশল জানার জন্য ধানের জার্মপ্লাজমসমূহের বৈশিষ্ট্যায়ন : ইতোমধ্যে প্রায় ১০০০ জার্মপ্লাজমের বেশি বিভিন্ন বিরূপ পরিবেশে যাচাই করা হয়েছে এবং নিম্নেউল্লেখিত জার্মপ্লাজমসমূহ ডোনারপ্যারেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এক্সেশন
|
পীড়ন পরিবেশ
|
পীড়নমাত্রা
|
মন্তব্য
|
ব্রি এক্সেশন নাম্বার -১৮৩৮
|
জলমগ্নতা
|
১৪দিন
|
দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ন নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে।
|
ব্রিএক্সেশন নাম্বার - ৪০৯৬
|
জলমগ্নতা
|
১৪দিন
|
দুই সপ্তাহ পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ন নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে।
|
ব্রি এক্সেশন নাম্বার- ৯৭, ১০২ এবং১৩৩
|
তাপ
|
ফুল ফোটার সময় ৭দিন পর্যন্ত ৩৫০-৩৮০ সেলসিয়াস
|
ফুল আসা পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল।
|
কালোজমা
|
জলমগ্নতা
|
১৬দিন
|
ষোল দিন পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ন নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে।
|
ডিজিআই-৩৪৯
|
জলমগ্নতা
|
১৬দিন
|
ষোল দিন পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ন নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে।
|
ডিজিআই-৩৪৯
|
জলমগ্নতা
|
১৬দিন
|
ষোল দিন পর্যন্ত পানিতে সম্পূর্ন নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারে।
|
ভূটানী ধান
|
ঠান্ডা
|
সমগ্র জীবনকালে ঠান্ডা সহিষ্ঞু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে
|
ঠান্ডা সহিষ্ঞু জাত উদ্ভাবনে ডোনার প্যারেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে
|
মিনআশাহী
|
ঠান্ডা
|
সমগ্র জীবনকালে ঠান্ডা সহিষ্ঞু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে
|
ঠান্ডা সহিষ্ঞু জাত উদ্ভাবনে ডোনার প্যারেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে
|
(৩) কৃষকদেরজন্যফসলব্যবস্থাপনা সমপর্কিতপ্রযুক্তিউদ্ভাবন
প্রযুক্তিরনাম
|
বিবরণ
|
মন্তব্য
|
বোরো মৌসুমে তীব্র শীতে সুস্থ সবল চারা উৎপাদন কৌশল
|
( ১)বোরো ধানে চারা উৎপাদনের সময় শৈত্য প্রবাহ হলে অর্থ্যাৎ তাপমাত্রা ১০ডিগ্রির নীচে চলে গেলে বীজতলা সাদা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। দিনের বেলায় সূর্য উঠার ৪-৬ ঘন্টা পর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং সূর্য অস্ত যাবার পূর্বেই পলিথিন সরিয়ে রাখতে হবে।
(২) যদি পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বীজতলায় ২-৪ সেঃমিঃ দাড়ানো পানি রাখলেও চারাকে অতিরিক্ত ঠান্ডার ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
(৩) বোরো ধানের চারা রোপনের সময় শৈত্য প্রবাহ চলতে থাকলে কয়েক দিন দেরীতে অর্থ্যাৎ শৈত্য প্রবাহের শেষে চারা রোপণ করলে মূল জমিতে চারার মৃত্যু কমানো সম্ভব।
|
এই প্রযুক্তি মূলতঃ ভেজা বীজতলার জন্য এবং যেসব এলাকায় বোরো মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তীব্র ঠান্ডা থাকে সেসব এলাকার জন্য প্রযোজ্য।
|
হাওড় অঞ্চলে বোরো ধানের চিটা সমস্যা মোকাবেলার কৌশল
|
বোরো মৌসুমে হাওড় অঞ্চলে স্বল্প জীবন কালের জাত সমূহকে ১৫নভেম্বর বা তারও পরে বপন ও ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের মাধ্যমে কাইচ থোড় ও থোড় অবস্থায় নিম্ন তাপমাত্রা জনিত ক্ষতি এড়ানো যায় এবং চিটা সমস্যা মোকাবেলা করা যায়।
|
হাওড়এলাকারজন্য
|
হাওড় অঞ্চলে বোরো ধান চাষে পাহাড়ি ঢল এড়ানো/ মোকাবেলার কৌশল
|
বোরো মৌসুমে হাওড় অঞ্চলে দীর্ঘ জীবনকালের জাতসমূহকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন ও ৪০-৪৫ দিন বয়সে রোপণের মাধ্যমে কর্তনকালীন সময়ে পাহাড়ি ঢল এড়ানো যায়।
|
হাওড়এলাকারজন্য
|
বোরো ধান চাষে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত চিটা সমস্যা মোকাবেলার কৌশল
|
বোরো মৌসুমে দীর্ঘ জীবনকালের জাতসমূহকে নভেম্বর মাসের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহে বপন ও ৪০-৪৫ দিন বয়সে রোপণের মাধ্যমে ফুল-ফোটাকালীন সময়ে উচ্চ তাপমাত্রাজনিত চিটা সমস্যা এড়ানো যায়। তবে ধানের ফুল-ফোটাকালীন সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করলে জমিতে দাড়ানো পানি ধরে রাখার মাধ্যমে অথবা পানি স্প্রে করে উচ্চ তাপমাত্রা জনিত চিটা সমস্যা মোকাবেলা করা যায়।
|
এপ্রিলের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে উচ্চ তাপমাত্রায় ঝুকিপূর্ন অঞ্চলের জন্য
|
বন্যা পরবর্তী রোপা আমন ধানের সার ব্যবস্থাপনা
|
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন ধানের জমিতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর ইউরিয়া সারের ২য় কিস্তি ও পটাশ সারের সম্পূর্ন পরিমাণ প্রয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত চারার দ্রুত পূনর্বাসন ও কুশির বৃদ্ধি ভালো হয়।
|
আকস্মিকবন্যাপ্রবনএলাকারজন্য
|
ব্রিধান৩২ এর হেলে পড়া প্রতিরোধ কৌশল
|
ব্রিধান৩২ এর হেলে পড়া প্রবণতা থাকায় পরিমিত পরিমানে সার প্রয়োগের পাশাপাশি কাইচথোর আসার সময় Multi-effect-Triazole (MET) ৩০০মিলিগ্রাম/লিঃ স্প্রে করে ব্রিধান৩২ এর হেলে পড়া প্রবণতা প্রতিরোধ করা যায়।
|
|
ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বীজ বপনের মাধ্যমে ধানের জীবনকাল কমে ও ফলনবাড়ে
|
ড্রাম সিডার দিয়ে সরাসরি বীজ বপনের মাধ্যমে ধান চাষ করলে রোপণ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৭% ফলন বৃদ্ধি পায় এবং একই সাথে ধানের জীবনকাল প্রায় ১০ দিন কমে যায়।
|
ধান-এজোলা দ্বৈত চাষ
|
ধান-এজোলা (Azolla) দ্বৈত ভাবে চাষ (dual culture) করলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায়।
|
(৪) ধানের শারীরতাত্ত্বিক তথ্য বা জ্ঞান উদ্ভাবন করা
বিষয়
|
জ্ঞানঅথবাতথ্যের উদ্ভাবন
|
বাংলাদেশের লবণাক্ত সহিষ্ণু বৈলাম ধানের চারা ও প্রজনন পর্যায়ের লবণসহিষ্ণু জিনগুচ্ছের মানচিত্র তৈরী (QTL Mapping)
|
লবণাক্ত সহিষ্ণু বাংলাদেশী স্থানীয় জাত বৈলাম ধানের চারা ও প্রজনন পর্যায়ের লবণসহিষ্ণু QTL চিহ্নিত করতে উক্ত জাতের জেনোটিকম্যাপ তৈরী করা হয়েছে। চারা অবস্থায় সম্ভাব্য ৬টি QTL এবং প্রজনন পর্যায়ে ৬টি QTL Cluster বিভিন্ন লিঙ্কেজ গ্রুপে (ক্রোমোজোম) সনাক্ত করা হয়েছে।
|
বাংলাদেশের লবণাক্ত সহিষ্ণু হরকুচ ধানেরচারা ও প্রজননপর্যায়েরলবণসহিষ্ণুজিনগুচ্ছেরমানচিত্রতৈরী (QTL Mapping)
|
লবণাক্তসহিষ্ণু বাংলাদেশী স্থানীয় জাত হরকুচ এর শারীরতাত্তিক কৌশল বের করা হয়েছে এবং চারা পর্যায়ে লবণ সহিষ্ণু জিনগুচ্ছ (QTL) চিহ্নিত করতে উক্ত জাতের জেনোটিকম্যাপ তৈরী করা হয়েছে। হরকুচে টিস্যু টলারেন্স এবং উচ্চ পটাশিয়াম আয়ন গ্রহণ এই দুইটি শারীরতাত্ত্বিক কৌশল রয়েছে। হরকুচে চিহ্নিত ২৪টি জিনগুচ্ছ (QTL) সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ৪টি জিনগুচ্ছ (QTL) (ক্রোমোজোম -৮, ১১ এবং ১২ তে অবস্থিত) চারার কান্ডে K+/Na+ এর অনুপাত নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে লবণ সহিষ্ণুতায় ভূমিকা রাখে
|
আলোক সংবেদনশীলতা
|
ব্রিধান৫৪ আলোক সংবেদনশীল জাত এবং আলোক সংবেদনীলতা প্রায় নাইজারশাইলের মত।
|
ঠান্ডা জনিত ক্ষতি পরিহার
|
ধানের প্রজনন পর্যায়ে ঠান্ডার ক্ষতি এড়ানোর জন্য অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা যাবে না। ব্রিধান২৮ এর মত স্বল্প জীবনকালের জাতের ক্ষেত্রে 20 নভেম্বরের পর পরই এবং ব্রিধান২9 এর মত লম্বা জীবনকালের জাতের ক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করে 40-৪৫ দিনের ধানের চারা রোপন করতে হবে।
|
বপনের সময় সমপর্কিত
|
অক্টোবর মাসে বীজ বপন থেকে নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে ধানের ভাল ফলন পাওয়া যায়। নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে স্বল্প জীবন কালের ধান ব্রিধান২৮ এর সর্বোচ্চ ৫০দিনের ও লম্বা জীবন কালের ধান ব্রিধান-২৯ এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ৬৫ দিনের চারা রোপণ করেও ভাল ফলন পাওয়া যায়।
|
বোরো মৌসুমের জন্য সংকট তাপমাত্রা
|
বোরো ধান কাইচথোড় এবং থোড় অবস্থায় নিম্ন তাপমাত্রা সংবেদনশীল। বোরো ধানে চিটা হওয়ার জন্য Agronomic PI ও Booting এ প্রযোজ্য সংকট নিম্ন তাপমাত্রা হলো ১২-১৩০C, সংকট উচ্চ তাপমাত্রা হলো ২৮-২৯০C। সংকট তাপমাত্রা এর নীচে বা উপরের তাপমাত্রায় ফলন কমে যায়।
|
জলমগ্নতা সহনশীল
|
ব্রি’র রোপা আমন জাত বিআর-১১, ব্রিধান৩০, ব্রিধান৩১, ব্রিধান৩২ এর মধ্যে ব্রিধান৩২ এর বন্যা সহিষ্ণুতা সবচেয়ে বেশী।
|
আকস্মিক বন্যা
|
অধিক আলোক সংবেদী জাতসমূহ আকস্মিক বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
|
প্রস্বেদন
|
প্রস্বেদনের হার কুশি পর্যায়ের চেয়ে ফুল আসা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশী।
|
ফলনের সাথে হারভেষ্ট ইনডেক্স এবং বায়োমাসের সম্পর্ক
|
(১)ধানের ফলনের সাথে তার হারভেস্ট ইনডেক্স (HI) এবং বায়োমাস (Biomass production) এর সর্ম্পক বিদ্যমান
(২)নাবি আমনে বায়োমাস (Biomass production) এর চেয়ে হারভেস্ট ইনডেক্স (HI) ধানের উচ্চফলনে বেশী অবদান রাখে।
|
পাতার আয়তন
|
ধান গাছের LAI কম হওয়া এর উচ্চ ফলনের জন্য অন্তরায়।
|
কার্বোহাইড্রেট রিজার্ভ
|
ধানে কার্বোহাইড্রেট রির্জাভের জন্য ধান গাছের কান্ড সবচেয়ে বেশী অবদান রাখে।
|
মূল বৃদ্ধির যাচাই প্রক্রিয়া
|
উদ্ভিদের গৌনপুষ্টি উপাদান Fe, 26 ppm মাত্রায় প্রয়োগ করলে ধান গাছের মূলের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্তহয়।
|
পানিরস্বল্পতা
|
কুশি পর্যায়ের প্রথমদিকে পানির অভাব (Drought stress) হলে ফলনের তেমন পার্থক্য হয়না। কিন্তু Booting stage এ পানির অভাব (Drought stress) হলেইন্টার নোডের বৃদ্ধি ব্যহত হয়, ধানের স্পাইকলেট মরে যায় ও চিটার পরিমাণ বেড়ে যায়।
|
বোরো মৌসুমে চারার পুর্নবাসনের সময় কাল
|
বোরো মৌসুমে জানুয়ারি মাসে রোপণকৃত চারায় পুর্নবাসন (Recovery) হতে ৪ (চার) সপ্তাহ সময় লাগে।বোরো মৌসুমের রোপণকৃত ধানের জীবনকাল বপনকৃত ধানের চেয়ে বেশী।
|
আমন মৌসুমে ধানের ফলন ও তাপমাত্রার সম্পর্ক
|
(১)রোপা আমন মৌসুমে প্রজনন পর্যায়ে নিম্ন তাপমাত্রা ২২০C হলে ফলন ভাল হয় কিন্তু নিম্ন তাপমাত্রা ২০০C নিচে গেলে ফলন ত্যাধিক হারে কমতে থাকে।
(২)আগষ্ট মাসে চারা রোপণ (Transplanting) ও সারিতে বপন (Line sowing) করে ধান চাষ করলে একই ফলন দেয় কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ পদ্ধতিতে (Transplanting) সারিতে বপনের চেয়ে বেশী ফলন পাওয়া যায়।
|
ক্রপ মডেলিং
|
ব্রিউদ্ভাবিত বিভিন্ন ধানের জাতের জেনোটিক কোইফিসিয়েন্ট ডাটা ব্রি’র ক্রপমডেলিং এর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
|
আবহাওয়াকেন্দ্র
|
(১)উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ Manual Weather Station ব্রি প্রধান কার্যালয় ও ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের (কুমিল্লা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, ভাঙ্গা ও হবিগঞ্জ) আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষন করে থাকে যাহা ব্রি’র বিভিন্ন গবেষণা বিভাগ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
(২)উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ ৬টি Automatic Weather Stations (ব্রি প্রধান কার্যালয় ও ৫টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের (রংপুর, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল ও ভাঙ্গা) এর মাধ্যমে বিগত ২০১২ সাল হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছে যাহা ব্রি’র বিভিন্ন গবেষণা বিভাগ কতৃক ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
|
|
|
Pest Management
০১) কীটতত্ত্ব বিভাগ
-
ধানক্ষেতে পোকা নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে আলোক ফাঁদের ব্যবহার
-
পোকা দমনের জন্য ধানক্ষেতে পোকাখেকো পাখি বসার জন্য ডাল স্থাপন (পার্চিং) প্রযুক্তি উদ্ভাবন
-
হাতজাল দ্বারা ধানের কীটপতঙ্গ দমন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
ধানের চারা রোপনের পর ৩০-৪০ দিন পর্যন্ত কীটনাশক ব্যবহারে বিরত থেকে পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন
-
কীটনাশক ছাড়া কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের প্রধান প্রধান পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
ব্রি সৌরশক্তি চালিত আলোক ফাঁদ উদ্ভাবন
-
ইকোলজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির মাধ্যমে পোকামাকড় ব্যবস্থাপনার টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন
-
ধানের প্রধান প্রধান পোকার আক্রমণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষতির দ্বারপ্রান্ত নির্ধারণ
-
বিভিন্ন ফাঁদ ব্যবহার করে ইঁদুর দমনের সবচেয়ে কার্যকরী ফাঁদ সনাক্তকরণ
-
বিভিন্ন ভেষজ নির্যাস নিম ও মেহগনি বীজ এবং মেহগনী তেল ব্যবহার করে পোকা দমন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকা দমন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
ধান ক্ষেতে মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি ও মাকড়সা সংরক্ষণ করে পোকা দমন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
বছরের কোন সময়ে কোন পোকার আক্রমণ বেশী হয় তার উপর ভিত্তি করে পোকা প্রাদুর্ভাবের দিনপঞ্জী উদ্ভাবন
-
ধানের ২৩২ ধরণের ক্ষতিকর ও ৩৭৫ ধরণের উপকারী পোকা সনাক্তকরণ
-
সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে থ্রিপস পোকা দমন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
ধানের নাড়া/ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকা দমন
-
বিভিন্ন মওসুমে প্রধান প্রধান পোকার আক্রমণের ফলে ফলনের ক্ষতি নিরুপন
-
ধানের খড়ের টেপি ব্যবহার করে উপকারী পোকা মাকড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
প্রাকৃতিক আবাসস্থল হেরফেরের মাধ্যমে পোকা ব্যবস্থাপনার কৌশল উদ্ভাবন
-
ফেরোমোন ফাঁদ ব্যহার করে ধানের পাতা মোড়ানো পোকা দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
ধানের মাজরা পোকা দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
পাতা মোড়ানো পোকা দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
বাদামি গাছফড়িং দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
সাদা-পিঠ গাছফড়িং দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
সবুজ পাতাফড়িং দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
গলমাছি দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
পামরি পোকা দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন
-
শিষকাটা লেদাপোকা/গান্ধি পোকা/থ্রিপস পোকা দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন।
-
ধানের মাজরা পোকা আক্রমণের অর্থনৈতিক ক্ষতির দ্বারপ্রান্ত নিরূপন
-
ধানের বাদামি গাছফড়িং পোকা দমন ব্যবস্থাপনার উপর লিফলেট তৈরী ও কৃষকের মাঝে বিতরণ
-
ধানের পাতা মোড়ানো পোকার দমন ব্যবস্থাপনার উপর লিফলেট তৈরী ও কৃষকের মাঝে বিতরণ
-
পার্চিং এর মাধ্যমে পোকা দমন ব্যবস্থাপনার উপর লিফলেট তৈরী ও কৃষকের মাঝে বিতরণ
-
ইকোলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির মাধ্যমে পোকামাকড় দমনের জন্য লিফলেট তৈরী ও কৃষকের মাঝে বিতরণ
-
বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাবৃন্দের সহজে ব্যবহার উপযোগী পোকামাকড় দমনের হাত বই তৈরী ও বিতরণ
-
জলজ আগাছা ব্যবহারের মাধ্যমে বাদামি গাছফড়িং দমন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
বাদামি গাছফড়িং ও সবুজ পাতাফড়িং এর নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
ধানক্ষেতে ৫০ ধরণের পোকা খেকো মাকড়সা সনাক্তকরণ
-
গান্ধি পোকার আক্রমণের ফলে ধানক্ষেতে ফলন ঘাটতি নিরূপন
-
পামরি পোকার পরজীবি পোকার (Parasitoid) প্রতিপালন পদ্ধতি উদ্ভাবন
-
বাদামি গাছফড়িং দমনে কীটনাশক স্প্রে করার জন্য ডাবল নজল উদ্ভাবন
-
কীটনাশক ছাড়া কিংবা অল্প পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহারে করে ধান উৎপাদনে পোকামাকড় দমন কৌশল উদ্ভাবন।
২) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ
-
ব্লাস্ট রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন। বিশেষ করে শীষ ব্লাস্ট রোগের কার্যকারী দমন ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন।
-
বাংলাদেশের ব্লাস্ট রোগের জীবাণুর রেস সনাক্তকরণ। ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী উপযোগী জিন সনাক্ত করে তা উচ্চ ফলনশীল জাতে প্রতিস্থাপনের কার্য সম্পাদন।
-
ধানের ব্লাস্ট রোগ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা শীর্ষক ই-লানিং পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ কোর্স প্রস্তুতকরণ ও ব্যবহার।
-
ব্লাস্ট রোগ দমনে কার্যকারী ৩৬ টি ছত্রাকনাশক সনাক্তকরণ।
-
ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী স্থানীয় জাত সনাক্তকরণ।
-
কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মীদের ধানের রোগ ও তার ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণ প্রদান।
-
ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন।
-
ধানের ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের জীবাণুর রেস সনাক্তকরণ। সাথে সাথে উক্ত রোগ প্রতিরোধী উপযোগী জিন সনাক্ত করে তা উচ্চ ফলনশীল জাতে প্রতিস্থাপনের কার্য সম্পাদন।
-
“সিম্পল লিনিয়ার রিগ্রেশন মডেল” ব্যবহার করে পাতাপোড়া রোগের কারণে ফলনের ক্ষতি নির্ধারণের পদ্ধতি উদ্ভাবন ।
-
ব্যাকটেরিয়াজনিত লালচে রেখা রোগের দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন।
-
খোলপোড়া রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা।
-
খোলপোড়া রোগ দমনে কার্যকারী ১০৫ টি ছত্রাকনাশক সনাক্তকরণ।
-
ট্রাইকো-কমপোস্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের খোলপোড়া রোগ দমন ব্যবস্থাপনা।
-
টুংরো রোগের দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন।
-
স্থানীয় জাত কুমড়াগোইড় এর মধ্যে রাইস টুংরো ভাইরাসের কিউটিএল (QTL) সনাক্তকরণ।
-
মলিকুলার টুলস ব্যবহার করে দ্রুত ও নিশ্চিত ভাবে রাইস টুংরো ভাইরাস সনাক্তকরণ।
-
লক্ষ্মীর গু রোগের জীবাণু কৃত্রিম মিডিয়াতে জন্মানো এবং তার দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন।
-
লক্ষ্মীর গু রোগের Yield Loss Assessment: Flyer model উদ্ভাবন।
-
চারা ধ্বসা, চারা পোড়া, ব্যাকটেরিয়াল লিফ স্ট্রিক, বাকানী, খোল পচা, বাদামী দাগ, উফরা, শিকড়ে গিট, দানায় দাগ, পাতা ফোস্কা, কান্ড পচা, স্টক পচা, শিকড় পচা, হলদে বামন এবং সাদা আগা রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা উদ্ভাবন।
-
রোগ প্রতিরোধী জাত/লাইন সনাক্ত করার জন্য উফরা, বাকানী, ব্লাস্ট, খোল পোড়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা পোড়া এবং পাতা ফোস্কা রোগের স্ক্রিনিং পদ্ধতি উদ্ভাবন।
-
রাইসপ্ল্যন্টারে ব্যবহারের জন্য রোগমুক্ত চারা উৎপাদনে “ট্রে-ম্যাট” প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
-
ধানের বীজ শোধন এবং অংকুরোদগম ডিভাইস “অঙ্কুরি” উদ্ভাবন।
-
পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ধানের রোগ দমনের জন্য সিলভার, কপার অক্সাইড এবং জিংক অক্সাইডের ন্যানো পার্টিকেল গ্রিনসিনথেসিস করা হয়েছে।
-
রোগ দমন ব্যবস্থাপনার লিফলেট ডিএই-র সহায়তায় সারা দেশের কৃষকের মাঝে বিতরন।
০৩) Rice Farming Systems
BRRI rice farming systems scientists have been conducting on-farm cropping systems research since 1984 to develop improved systems to increase farmers' incomes. They have conducted site-specific research in different agroecological environments in partnership with farmers, agricultural extension department and NGOs for developing technologies. They developed (a) rice-fish farming system for the deepwater areas, (b) appropriate timing of crop establishment and suitable varieties and management practices for the rice-wheat cropping system, and (c) cropping system for incorporating short-duration pulses and oilseeds in between two MV rice crops for diversified farming and balanced human and livestock nutrition. BRRI Farming Systems scientists developed 31 improved cropping patterns for 30 agro ecological zones of Bangladesh.
Socioeconomics and Policy
০১) কৃষি অর্থনীতি বিভাগ
১. বোরো মৌসুমের ৪১.০৫ ভাগ জমিতে ব্রি ধান২৮ (১৮.৯৩ ভাগ) এবং ব্রি ধান২৯ (২২.১২ ভাগ) আবাদ হচ্ছে। আমন মৌসুমে ব্রি ধান১১ এর সাথে ব্রি ধান৪৯ ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমন মৌসুমে ব্রি ধান৪৯ প্রায় ১৫ ভাগ জমিতে চাষ হয়। আউশ মৌসুমে ব্রি ধান২৮ প্রায় ৭.৫১ ভাগ এবং ব্রি ধান৪৮ ৪৬.০৮ ভাগ জমিতে চাষ হচ্ছে। বোরো মৌসুমে ২৫ ভাগ জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হচ্ছে।
২. ব্রি’র জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান৮৯ সর্ব্বোচ্চ ফলন দিচ্ছে (৬.৬৯ টন/হেঃ) এরপরই রয়েছে ব্রি ধান২৯ যার গড় ফলন ৬.৫১ টন হেঃ। আমন মৌসুমে ব্রি ধান৮৭ সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে (৫.১৫ টন/হেঃ) এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রি ধান৫২ (৫.০২ টন/হেঃ) ব্রি ধান৮২ আউস মৌসুমে ও সর্বোচ্চ ফলন দেয় (৪.৪৮ টন/হেঃ)। ফলনের দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ব্রি ধান৪৮ (৪.৪৭ টন/হেঃ) বোরো হাইব্রিড ধানের গড় ফলন ৭.৪৬ (টন/হেঃ)
৩. আউশ, আমন এবং বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন লাভজনক। ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো
অধিক শ্রমিক এবং সেচ খরচ।
৪. কৃষকগন প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বীজ ব্যবহার করে থাকেন। অন্যান্য সার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করলেও ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করেন। সারের সঠিক মাত্রা সম্পর্কে কৃষকগন ওয়াকেবহাল নন। বোরো ধানের গড় ফলন আউশ এবং আমন ধানের চেয়ে বেশী হলেও আমন ধানের আবাদ বেশী লাভজনক।
৫. মানব শ্রম ধান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপর দিকে কৃষক নিজে ধান থেকে প্রাপ্ত আয়ের সর্বোচ্চ অংশের ভাগীদার।
৬. বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের অপর সম্ভাবনা থাকলেও প্রাকৃতিক অবস্থা ও দামের অনিশ্চয়তা এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত।
৭. ধানের জমি আম বাগানে রুপান্তরিত হওয়ার কারন হিসেবে ৭৫% কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর নেমে যাওয়া, আম চাষ উপযোগী কৃষি পরিবেশ, শস্যের তুলনায় সহজ চাষাবাদ পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করেন। ধান চাষে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ১.১৭ টাকা আয় হয়। অন্যদিকে আম চাষে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ৫.২০ টাকা আয় পাওয়া যায়।
৮. বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণের নিমিত্তে যে সমস্ত কৃষকদের নির্বাচন করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষক উক্ত ধানের জাত সম্পর্কে অবগত আছেন। যে সমস্ত এলাকা ধানের জাত সম্প্রসারনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ঐ সমস্ত এলাকা পানির স্বল্পতার কারনে দীর্ঘ জীবনকাল বিশিষ্ট ব্রি ধান২৯ আবাদের উপযোগী নয়। বাজারে বীজের প্রাপ্রতা এবং সংরক্ষণ সুবিধা থাকার কারণে কৃষকগন বীজ সংরক্ষন করেন না।
৯. ধান বাজারজাত করার ক্ষেত্রে মিলারগন সর্বোচ্চ লাভ করে থাকে। লাভের দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থানে আছে খুচরা বিক্রেতা। ধান বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রে মিলার এবং পাইকারী বিক্রেতারাই সর্বোচ্চ খরচ বহণ করে। মোট লাভের অর্ধেকের বেশি (৫৮%) যোগান শৃংঙ্খলের সাথে সংশ্লিষ্ট পেয়ে থাকে যা কাংখিত নয়। ধান/চালের বাজারজাত কাঠামোতে মধ্যসত্ত্বভোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নির্ধারণ করাও জরুরী।
১০.আমন ও বোরো ধানের উৎপাদনের ধারা ক্রমবর্ধমান থাকার কারণে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধানের মোট উৎপাদন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায় যদিও পরবর্তীতে উৎপাদন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।ধানের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ধারা মোট মজুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির পরিমানও কমাবে বলে আশা করা যায়।
১১. মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে চালের ভোগ কমলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চালের চাহিদা বাড়বে।
১২. উচ্চ জ্বালানী মূল্য ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধির কারণে সেচ খরচ প্রতি বছরই বাড়ছে। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ অগভীর নলকূপ এবং গভীল নলকূপ দিয়ে সেচ দিলে খরচ যথাক্রমে ২০% ও ১৯% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
১৩. হাইব্রিড ধানের জমির পরিমান উঠানামার পাশাপাশি ২০০২-২০১১ মেয়াদে তা ক্রমহ্রাসমান। একই সময়ে ব্রিধান২৯ এবং অন্যান্য আধুনিক ধানের এলাকা উঠানামা করছে। হাইব্রিড ধানের ফলন এলাকাভেদে ভিন্ন হচ্ছে যদিও এর ফলন মধ্যম মেয়াদী ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে অনেক বেশী।
১৪. দক্ষিনাঞ্চলের ফসলের পর্যায়ক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে উক্ত এলাকাতে বোরো এবং আউশ ধান আবাদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের স্বল্পমেয়াদী আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। দেশেরে দক্ষিনাঞ্চলের জন্য লম্বা চারা বিশিষ্ট জাতের পাশাপাশি ইউ এস জি প্রয়োগ যন্ত্র এবং ধান শুকানো যন্ত্রের ব্যবহার সম্প্রসারনের মাধ্যমে ধানের আবাদ বৃদ্ধি কর সম্ভব।
১৫. ধান ভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের কারণে খরা প্রবণ রাজশাহী এলাকার কৃষকদের ধান উৎপাদন ও আয় বেড়েছে।
১৬. ১৯৭১/৭২ থেকে ১৯৮৩/৮৪ মেয়াদে ধানী জমি বৃদ্ধির হার ছিল ০.৮৩ ভাগ এবং ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণের কারণে মোট উৎপাদন বেড়েছে। ১৯৮৪/৮৫ থেকে ২০১৮/১৯ মেয়াদে আউশ, আমন এবং গমের জমির প্রবৃদ্ধি কমেছে, বোরো এবং ভূট্টার জমির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৭. বাংলাদেশে চালের নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে বিক্রি করার প্রবনতা লক্ষনীয়। ব্রি ধান২৮ কে পরিবর্তন করে মিনিকেট এবং পাজামকে পরিবর্তন করে নাইজারশাইল চাল তৈরী করা হচ্ছে।
১৮. যে সমস্ত কৃষক অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করেন না তারাও সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ধান বিক্রি করে আবার কিনে খান।
১৯. এল সি সি প্রযুক্তি এবং ইউ এস জি সার ব্যবহার করে ইউরিয়া সার সাশ্রয় করা যায়। এক সাথে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে ধানের ফলন ও বাড়ে।
২০. ড্রাম সিডারের মাধ্যমে জমিতে বীজ বপন করলে ধানের ফলন এবং আয় বাড়ে, যদি ও উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে জমিতে বেশী আগাছা দেখা যায় যা দূর করতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগে।
২১. ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ চালিত সেচের উপর সরকার ভর্তূকী দিয়ে থাকে। কিন্ত্তু বেশীরভাগ কৃষকই উক্ত ভর্তূকী সম্পর্কে অবগত নন। অধিকন্ত্ত, ভর্তূকীর সূফল কৃষকের পরিবর্তে সেচ যন্ত্রের মালিকগন ভোগ করে থাকে।
২২. জমিতে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ৩০% পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। যে সমস্ত এলাকায় চুক্তি ভিত্তিক সেচ খরচ নির্ধারণ করে ধান চাষ করা হয় সেখানে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষীর কোন লাভ হয় না। তবে সেচ যন্ত্রের মালিক নিজের জমিকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন।
২৩. ১৯৯৬-২০০৯ মেয়াদে ব্রি ধান২৯ এ গবেষনা বিনিয়োগে প্রতি এক টাকা বিনিয়োগ করে ১.৫৭ টাকা হারে আয় পাওয়া গেছে।
২৪. বি আর১১ গবেষনা বিনিয়োগে প্রতি এক টাকা বিনিয়োগ করে ১.৫০ টাকা হারে আয় পাওয়া গেছে। উক্ত জাত আবাদ করে বাড়তি ফলন থেকে ১০৯.৮৩ বিলিয়ন টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে।
২৫. ১৯৯০-৯১ থেকে ২০১৭-১৮ মেয়াদে ব্রি’র গবেষনা ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ থেকে প্রতি ১ টাকা খরচ করলে ৯.০ টাকা লাভ পাওয়া যায়।
২৬. ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যারা শুধু ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত চাষ করেছিল তারা ৩.০০ ভাগেরও বেশি দ্রারিদ্রের হার কমাতে পেরেছিল।
২৭. সময়ের ব্যবধানে চিকন ও মাঝারী মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে এবং মোটা চালের চাহিদা কমেছে।
২৮. সুগন্ধি চালের চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় এর আবাদ এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
০২) কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ
কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষণ মাঠের আদর্শিক পরিমাপ ও আকৃতি নির্ণয় করেছেন। তাছাড়াও গভীর পানির ধানের ফলন এর অনুমানের জন্য আদর্শিক পুনরাবৃত্তির সংখ্যা, পরিমাণ, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সাথে ধানের রোগের পরিমাণ প্রাক্কলনের জন্য নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ণয় এবং ফলন ও ফলনের প্যারামিটার (ধ্রুবকসমূহ) নির্ণয়ের পদ্ধতি বের করা হয়েছে। ধানের বিভিন্ন জাতের স্থায়িত্ব মডেল, ধানের উৎপাদক, ভোক্তা এবং উৎপাদক-কাম-ভোক্তার অগ্রাধিকার-ভিত্তিক মডেল উদ্ভাবন এবং ধানের উৎপাদন ও এলাকার অর্থনৈতিক মডেল ও বোরো ধানের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে নিম্ন তাপমাত্রার প্রভাব নির্ণয় করা হয়েছে। জীব বিজ্ঞানীদের জন্য “সিম্পল লেসন ফর বায়োমেট্রি” নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। পরিসংখ্যানবিদগন গবেষণা করে ফলনের উপর বিনষ্ট গোছাড় প্রভাব ও বোনা আউশের বায়োমেট্রিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের আদর্শিক নমুনার পরিমান নির্ণয় করেছেন। এছাড়া, জলবায়ুর নিয়ামক এর উপর ভিত্তি করে বৃষ্টি নির্ভর ধানের ফলনের পূর্ভাবাস পদ্ধতির উন্নতিকরণ। বাংলাদেশের সব উপজেলার শস্য-বিন্যাস জরিপ করার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরিকরণ। উপরন্তু, কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সাথে গবেষণা করে সেচকৃত অগভীর নলকূপ দ্বারা ধানের জমিতে আর্সেনিক মাত্রার স্থানিক পরিবর্তনশীলতা নির্ণয় করেছেন। বর্তমানে কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ নিজস্বভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রায় ৫০০টি ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত করেছে। নিম্নে কিছু উল্লেখ্যযোগ্য অর্জন দেয়া হলোঃ
১। ব্রি’র পরিসংখ্যানবিদগণ ধানের সাথে মাটি পরীক্ষার জন্য সর্বোত্তম প্লট আকৃতি ও নমুনা পরিকল্পনা উদ্ভাবন ।
২। ধান ক্ষেতে রোগ মূল্যায়নে নমুনায়নের পদ্ধতি উদ্ভাবন ।
৩। জলবায়ু প্রভাবকের উপর ভিত্তি করে বৃষ্টি নির্ভর ধানের ফলনের পূর্বাভাস নির্ণয় ।
৪। বাংলাদেশে ধানের এলাকা ও উৎপাদনের আনুমানিক হিসাব নির্ণয় ।
৫। ব্রি জাতসমূহের স্থায়িত্ব পরীক্ষণের জন্য একটি স্থায়িত্ব মডেল ।
৬। আপেক্ষিক পানি সরবরাহের ভিত্তি ও বাংলাদেশে বৃষ্টি নির্ভর ধানের উৎপাদনের পরিবেশ বৈশিষ্ট্যায়ন ।
৭। স্থায়িত্ব পরীক্ষণের জন্য একটি নতুন পরিসংখ্যানিক মডেল তৈরী যা সময়ের সাথে উৎপাদনের উঠা-নামা এবং বিভিন্ন স্থানের ও ফলনের উপর ভিত্তি করে স্থায়িত্বের (জেনো টাইপের) পরিমাপ করে।
৮। বোরো ধানের উৎপাদনের পরিবেশ চিহ্নিতকরণ ও বৈশিষ্ট্যকরণ।
৯। ধানের জাতের বৈশিষ্ট্যের পরীক্ষণের জন্য বহুজাতের পরিসংখ্যানিক কৌশল প্রণয়ন।
১০। মাটির ভৌত কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পরিবেশকে ছয়টি ধান উৎপাদন পরিবেশে বৈশিষ্ট্যায়ন।
১১। ধানের জাতের উপর ভিত্তি করে উৎপাদক, ভোক্তা এবং উৎপাদক-কাম-ভোক্তার অগ্রাধিকার ভিত্তিক মডেল উদ্ভাবন।
১২। বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত আউশ, আমন ও বোরো ধানের উৎপাদনের পূর্বাভাস নির্ণয় ।
১৩। জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে বাংলাদেশে ২৩টি জেলার পানি ও মাটির আর্সেনিক মাত্রার ম্যাপ তৈরী ।
১৪। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সহিত বোরো ধানের উৎপাদনের সর্ম্পক নির্ণয়-সহ জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে বোরো ধানের উৎপাদনের এলাকা তথা বোরো ধানের উপযোগী এলাকার ম্যাপ তৈরী ।
১৫। জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশে আমন ধানের উৎপাদনের উপর বৃষ্টিপাত ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব এবং রোপা আমন মৌসুমে ব্রি ধানের জাত উপযোগী এলাকা বিশ্লেষণপূর্বক বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) কণট্যুর ম্যাপ তৈরী ।
১৬। ধান চাষের জন্য সেচকৃত জলাভূমির নির্দেশিত জায়গায় আর্সেনিক দূষিত অগভীর নলকূপের দ্বারা আর্সেনিক দূষিত মাটির স্থানিক পরিবর্তনশীলতা নির্ণয়।
১৭। বাংলাদেশে ধান, গম, ভূট্টার এলাকা ও উৎপাদনের পরিবর্তনশীলতা নির্ণয়
১৮। বাংলাদেশেরে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পানি ও মাটির আর্সেনিক অবস্থা নিরূপণেরর জন্য নমুনা সংগ্রহের প্রোটোকল নির্ণয় ।
১৯। জলবায়ু এবং ধানের এলাকা ও উৎপাদনের তথ্য ডাটাবেজ আকারে সংরক্ষণ।
২০। ডিজিটাইজিং, এডিটিং ও বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে প্রায় ৫০০টি ডিজিটাল ম্যাপ প্রস্তুত।
২১। বাংলাদেশে আবহাওয়াজনিত খরা এলাকা চিহ্নিতকরণ।
২২। বিভিন্ন পরিবেশে ব্রি’র বিভিন্ন ধানের জাতের উপর আর্সেনিকের প্রভাবের পরিমাপ নির্ণয়।
২৩। মৌজা অনুযায়ী বাংলাদেশে আউশ ধান চাষাবাদের সম্ভাব্য এলাকার ম্যাপ প্রস্তুত।
২৪। ২০২০ সালে বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ম্যাপ প্রস্তুত।
২৫। বাংলাদেশে আমন ২০২০ ও বোরো ২০২০-২১ মওসুমের ধানের এলাকা ম্যাপ প্রস্তুত।
২৬। আবহাওয়ার পূর্বাভাস-ভিত্তিক ধান উৎপাদনে পরামর্শ সেবা
আইসিটি সেল :
১. রাইস প্রোফাইল, রাইস সল্যুশন (সেন্সর-বেজড রাইস পেস্ট ম্যানেজমেন্ট), রাইস নলেজ ব্যাংক (আরকেবি) এবং মডার্ন রাইস নার্সিং মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে।
২. ব্রি সদর দপ্তর এবং সকল আঞ্চলিক কার্যালয়ে ডি-নথি ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে।
৩. ব্রি ই-জিপি সিস্টেম চালু করেছে।
৪. আইসিটি কাজের মাধ্যমে উদ্ভাবনী সেবা প্রদানের উৎকর্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৬ এ জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরস্কার-২০১৬ পেয়েছে।
৫. আধুনিক ধান ও ধান সম্পর্কিত সর্বশেষ তথ্য দিয়ে একটি ডায়নামিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বাংলাদেশ রাইস নলেজ ব্যাংক (বিআরকেবি) তৈরি করা হয়েছে।
৬. বাংলা এবং ইংরেজি উভয় পদ্ধতিতে ব্রি ওয়েব পোর্টাল (www.brri.gov.bd) তৈরি করা হয়েছে।
৭. সকল বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তাদের জন্য ব্রি ডোমেইন এ স্বতন্ত্র ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি ও পিডিএস অ্যাকউন্ট তৈরি কারা হয়েছে।
৮. ব্রি এর সমস্ত বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তাদের জন্য লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে।
৯. পাঁচটি আঞ্চলিক আঞ্চলিক কার্যালয়ে রংপুর, বরিশাল, সোনাগাজী, কুমিল্লা এবং হবিগঞ্জের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং চারটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে ২ (দুই) এমবিপিএস ফুল-ডুপ্লেক্স, ডেডিকেটেড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়েছে।
১০. নিজস্ব ফেসবুক গ্রুপ “ব্রি নেটওয়ার্কস” তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, ব্রি এর একটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজও রয়েছে।
১১. ব্রিতে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, বিভাগ, আঞ্চলিক এবং শাখা প্রধানদের গবেষণা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য স্কাইপ অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করা হয়েছে।
১২. ব্রিতে শ্রমিক ব্যবস্থাপনার জন্য লেবার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে।
১৩. ব্রিতে অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন চালু করা করেছে।
১৪. ব্রিতে ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুক্তোপাঠ’ (www.muktopaath.gov.bd) চালু করা হয়েছে।
১৫. ব্রিতে ওয়েবসাইট দৃশ্যমান করার জন্য বিদ্যমান ইংরেজী ডোমেইন (www.brri.gov.bd) এর পাশাপাশি বাংলা ডোমেইন (বিআরআরআই.বাংলা) নিবন্ধিত করা হয়েছে।
০৩) খামার ব্যবস্থাপনা বিভাগ
০১.ঠিকাদারের শ্রমিক ব্রি’র শ্রমিক অপেক্ষা দ্রুত কাজ করতে পারে, কিন্তু ব্রি’র শ্রমিকদের কাজের গুনগত মান ভাল। পরোক্ষ তত্বাবধান ও চূক্তিতে কাজ করালে তা দ্রুত সম্পন্ন হলেও পরোক্ষ তত্বাবধানে করানো কাজের গুনগত মান ভাল।
০২. ধান উৎপাদনের বিভিন্ন কার্যাদি সম্পাদনে ঠিকাদারের শ্রমিক থেকে ব্রি’র নিয়মিত শ্রমিকের অধিক সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু নিয়মিত শ্রমিকের ক্ষেত্রে কাজের গুনগত মান ভাল। বপন পদ্ধতিতে ধান চাষে অন্যান্য পদ্ধতি অপেক্ষা কম সময় লাগে।
০৩. ১৮ থেকে ৩২, ৩৩-৪৭ এবং ৪৮-৬২ বছরের শ্রমিক গ্রুপের মধ্যে তুলনা করে দেখা যায়, ১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের শ্রমিকগন অধিক দক্ষ এবং ধান উৎপাদনের বিভিন্ন কার্যাদি সম্পাদনের জন্য সকাল ৬ টা থেকে সকাল ৮ টা ৪০ মিঃ পর্যন্ত সময় বেশী উপযোগী। মহিলা শ্রমিকগন নিড়ানী কাজে অধিক দক্ষ এবং পুরুষ শ্রমিকগণ শস্য কর্তন এবং মাড়াই কাজে পারদর্শী।
০৪. ১২ ঘন্টা ভিজানো এবং ১২ ঘন্টা জাগ দিয়ে কাদাময় জমিতে বীজ বপন করলে, এর চেয়ে কম/বেশী সময় জাগ দেয়ার চেয়ে বীজের ভাল অংকুরোদগমন হয়।এভাবে বীজ বপন করলে অধিকসংখ্যক ধানের চারা পাওয়া যায়। ফলে বীজ ধান পরিমাণে কম লাগে, ধান উৎপাদন খরচের সাশ্রয় হয় ও কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হন।
০৫. ধানের জমিতে শ্যাওলা দমনের জন্য হেক্টর প্রতি ১০ লিঃ পানিতে ১০০ গ্রাম কপার সালফেট মিশিয়ে ধান লাগানোর ২৫ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করলে শ্যাওলা দমন করা যায় এবং ধান গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভাল হয়।
০৬. ধান রোপণে ৩৮ থেকে ৪৬ দিনের মধ্যে নিড়ি যন্ত্র ব্যবহার করলে, মানুষের দ্বারা ঘাস কাটার কারণে ফসণের কোন পার্থক্য হয় না, তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী যন্ত্র বা শ্রমিক দ্বারা আগাছা দমন করা যায়।
০৭. ধান উৎপাদনে যদি জমিতে দানাদার ইউরিয়ার পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয় তবে হেক্টর প্রতি ৪,০১৭/- টাকা লাভ হয়। হাত দিয়ে আগাছা দমন এবং উইডার মেশিন দিয়ে আগাছা দমনের পরিবর্তে আগাছানাশক রিফিট ব্যবহার করলে হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬,১২৩/- টাকা এবং ২,৯৩৩/- টাকা লাভ হয়।
০৮. ধান লাগানোর ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ধান গাছের আগার দিক হতে ৪ থেকে ১০ সেঃ মিঃ কেটে ফেললে নেতিয়ে পড়ার প্রবনতা হ্রাস পায়। যে সমস্ত ধান গাছের বৃদ্ধি খুবই বেশি এবং নেতিয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে সে ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তি প্রযোজ্য ।
০৯. ড্রাম সীডার দ্বারা বীজ বপন করলে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে ধানের ফলন ৫- ৮% বেশী এবং ১০- ১৫% শ্রমিক কম লাগে। এছাড়াও উৎপাদন সময় কাল ৭- ১০ দিন কমে যায়।
১০. ধান লাগানো, আগাছা বাছাই, কর্তন ও মাডাই কাজে, শ্রমিকদের ১০০%, ৮০%, ৬০%, ৪০% ও ২০% সমযে তদারকিতে দেখা যায, ১০০% তদারকীতে বিভিন্ন কাজে শ্রমিক সংখ্যা সব চেযে কম লাগে এবং এভাবে তদারকী যত কম করা হয. ততই শ্রমিক সংখ্যা বেশী লাগে এবং যখন কোন তদারকী করা হয না, তখন শ্রমিক সংখ্যা সবচেযে বেশী লাগে। অর্থাৎ শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি হলে সাথে সাথে তদারকীও বৃদ্ধি করা প্রযোজন।
১১. ধান গাছে ফুল আসার ৩০-৩২ দিন পর ধান কর্তন করলে ভাল বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
১২. ধান চাষে বেশি বয়সি চারার চেয়ে কম বয়সি চারা (১৫ থেকে ২০ দিনের চারা) রোপন করলে কুশির সংখ্যা, শীষের সংখ্যা ও প্রতি শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ফলে ধানের ফলনও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়।
১৩. ধান গাছের পরিপক্ক পর্যায়ে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে বীজের গুণগত মান হ্রাস পায় অর্থাৎ বীজের Germination Percentage (GM), Seedling Vigor Index (SVI), High Density Grain (HDG), Shoot Dry Weight (SDW), Root Dry Weight (RDW)উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়। এই সমস্ত ধান বীজ হিসেবে ব্যবহার না করাই উত্তম।
১৪. ব্রি, গাজীপুর খামারের গবেষণা মাঠসহ গাজীপুরের অধিকাংশ জমিতে জমি তৈরির জন্য ৪/৫টি চাষের প্রয়োজন নাই। একটি চাষের পর হাত দিয়ে আগাছা পরিষ্কার অথবা আগাছানাশক ব্যবহার করে পরে একবার জমি চাষ করাই যথেষ্ট।
১৫.বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রস্তাবিত সার ব্যবস্থাপনার সাথে যদি ধানের দুধ অবস্থা(Milking stage) ও ডাফ অবস্থা(Dough stage) পর্যায়ে ৬০ গ্রাম এমওপি + ৬০ গ্রাম থিওভিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করা হয় তাহলে প্রায় ১৮% বেশি দাগমুক্ত দানা পাওয়া যায়।
১৬. ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ৩ থেকে ৪ টন জৈব সার প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে জৈব সারের ডোজ বৃদ্ধি করতে হবে অথবা মিশ্রিত সার ব্যবস্থাপনা যেমন ব্রি কর্তৃক সুপারিশকৃত সারের ৫০% এর সাথে প্রতি হেক্টরে ৩ টন পল্ট্রি সার প্রয়োগ করে ধান উৎপাদন করলে মাটির গুনাগুনের পাশাপাশি ফলনও ভালো হবে।
১৭. আমন মওসুমে স্বল্প মেয়াদি ধানের জাতের ক্ষেত্রে ১৫ সে.মি.*১৫ সে.মি. ও ২০ সে.মি. * ১৫ সে.মি স্পেসিং দিয়ে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বোরো মওসুমে ২০ সে.মি. *২০ সে.মি স্পেসিং এ ধানের ভালো ফলন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে উভয় মওসুমে প্রতি গুছিতে একটি থেকে তিনটি করে সতেজ চারা রোপন করলে কুশির সংখ্যা, শীষের সংখ্যা এবং প্রতি শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে ধানের ফলন ও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়।
১৮. আমন মওসুমে স্বল্প জীবন কাল সম্পন্ন ধানের জাতের ক্ষেত্রে ১৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ সে.মি.*১৫সে.মি অথবা ২০ সে.মি.* ১৫ সে.মি স্পেসিং দিয়ে চারা রোপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায় অন্যদিকে বোরো মওসুমে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ জানুয়ারীর মধ্যে২০ সে.মি. * ১৫ সে.মি স্পেসিং দিয়ে চারা রোপন করলে ধানের ভালো ফলন পাওয়া যায়।
১৯. ধান উৎপাদনে গাজীপুর অঞ্চলে কৃষি খামার শ্রমিক মুজুরি প্রতি বছর ক্রমান্ময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরের বিভিন্ন সময় শ্রমিক মুজুরির বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় এবং বর্তমানে অর্থ্যাৎ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কৃষি খামার শ্রমিক মুজুরি গড়ে ৪৮৮-৫৪৩/- যা ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ছিল ২৩০-২৫৫/-
খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর ব্যবস্থাপনা
০১) খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগ
BRRI agricultural engineers have developed 20 agricultural machinery/prototypes:
-
BRRI Diaphragm Pump
-
BRRI Hydrotiller
-
BRRI Drum Seeder
-
BRRI Upland Seeder
-
BRRI Manual Transplanter
-
BRRI Weeder
-
BRRI Kishan Weeder
-
BRRI Rice Wheat Reaper
-
BRRI Open-Drum Thresher
-
BRRI Rice-Wheat Thresher
-
BRRI Power Winnower
-
BRRI Srr1 Drier
-
BRRI Propeller Pump
-
BRRI Rice-Hul Stove
-
BRRI Improved Chula
-
Fertilizer Applicator
-
Micro Rice-Mill
-
Power Tiller Mounted Rice Huller.
-
Micro Rice Flour Mill
-
BRRI Ground Nut Sheller.
০২) কারখানা যন্ত্রপাতি ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ
সাফল্য:
১। ব্রি স্বচালিত ধান কাটা যন্ত্র
২। ব্রি স্বচালিত ঘাস কাটা যন্ত্র
৩। সৌর শক্তি চালিত শস্য মাড়াই যন্ত্র
৪। সৌর শক্তি চালিত শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
৫। পাওয়ারটিলার চালিত শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
৬। চাষের গভীরতা ভিত্তিতে ফলন নিরুপণ
৭। মাটির কোন পেনিট্রেশন রেজিস্ট্যান্স নির্ণয়
৮। ট্রাক্টর মাউন্টেড স্ক্রেপারের উন্নয়ন
৯। ব্রি’র যানবাহন এবং বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য ডাটাবেস তৈরিকরণ
১০। ডিজেল ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে পামওয়েলের ব্যবহার নিরুপণ
১১। মাঠ র্পযায়ে কৃষি যন্ত্রপাতির রক্ষনাবক্ষেণের জরিপ চিত্রায়ন
১২। ব্রি’র যানবাহন এবং বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষনাবক্ষেণ
১৩। শক্তি চালিত বিভিন্ন ধান মাড়াই যন্ত্রের কর্মদক্ষতা তুলনাকরণ
১৪। ব্রি’র ইঞ্জিনিয়ারদের অটোক্যাড প্রশিক্ষণ প্রদান
১৫। ব্রি রিপারের উপর বুকলেট ও লিফলেট প্রকাশ
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি:
১। ব্রি স্বচালিত ধান কাটা যন্ত্র
২। ব্রি স্বচালিত ঘাস কাটা যন্ত্র
৩। সৌর শক্তি চালিত শস্য মাড়াই যন্ত্র
৪। সৌর শক্তি চালিত শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
৫। পাওয়ারটিলার চালিত শস্য ঝাড়াই যন্ত্র
Technology Transfer
০১) ফলিত গবেষণা বিভাগ
১. ফলিত গবেষণা বিভাগ ২০১৯-২০ মওসুমে ৪৫টি অগ্রগামী কৌলিকসারির ভ্যালিডেশন ট্রায়াল বাস্তবায়ন করেছে যার মধ্য থেকে ৩ টি সারিকে PVT র জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
২. উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২ টি উৎপাদন প্রযুক্তির ভ্যালিডেশন ট্রায়াল বাস্তবায়ন করেছে যেগুলো কৃষক পর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য ব্রি থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
৩. ব্রি’র উদ্ভাবিত জাত দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য বিগত ২০১৯-২০ বছরে ১৫৬৩ টি প্রদর্শনী (বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচী) বাস্তবায়ন করেছে। যার মাধ্যমে প্রায় ৩১৭ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদিত ধানের মধ্য থেকে কৃষকগণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৫১ টন বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করেছে।
৪. এছাড়াও, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে সারা দেশে ব্রি উদ্ভাবিত আধুনিক ধানের জাতের ৪৩৪ টি উপযোগিতা পরীক্ষণ (Head to Head Adaptive Trial) বাস্তবায়ন করা হয়।
৫. আধুনিক ধান উৎপাদনে কৃষকের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মোট ৯১টি কৃষক প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে যার মাধ্যমে কৃষক এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোট ২৭০০ জন কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
৬. উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রদর্শনীর উপর মোট ৫০ টি মাঠ দিবস বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এসব অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী, কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ মোট ৭০০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
৭. ফলিত গবেষণা বিভাগের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি উদ্ভাবিত এবং জনপ্রিয় ধানের জাত সমূহের প্রায় ৭ টন মানঘোষিত বীজ ব্রি গবেষণা মাঠে উৎপাদন করা হয়েছে। যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্রি ধান জাত সম্প্রসারণের কাজে নিয়োজিত কৃষক ও স্টেকহোল্ডারদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে।
৮. ফলিত গবেষণা বিভাগ কর্তৃক বিগত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ২ টি কৃষক বীজ কেন্দ্র স্থাপণ করা হয়েছে।
০২) প্রশিক্ষণ বিভাগ
-
প্রশিক্ষণ প্রযুক্তি হস্তান্তরের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে কাজ করে। ব্রি কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ সমূহ ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। ব্রি অদ্যবধি ১,৪২,১২৯ হাজারেরও বেশী ধান উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে ধান উৎপাদন প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এদের মধ্যে ৩,৫৫৪ জন ধান বিজ্ঞানী, ৩৫,০৭৫ জন সম্প্রসারণবিদ ও ১,০৩,৫০০ জন ধান উৎপাদনে জড়িত কৃষক।
-
প্রশিক্ষণ বিভাগ কর্তৃক বাংলদেশ রাইস নলেজ ব্যাংক সংক্ষেপে বিআরকেবি (www.knowledgebank-brri.org ) নামক ধান উৎপাদন প্রযুক্তি বিষয় একটি অনলাইন তথ্য ভান্ডার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইহা ব্যবহার করে সর্বস্তরের মানুষ ধান উৎপাদনের সকল প্রযুক্তি সর্ম্পকে জানতে পারেন।