ড.মুনসী সিদ্দীক আহমাদ, ১৯২৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ফরিদপুর জেলার মধূখালি উপজেলার আড়কান্দি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন । কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে মেট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৬ সালে আই এস. সি পাশ করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৯ সালে বি.এজি ডিগ্রী লাভ করেন এবং এগ্রিকালচার সার্ভিসে যোগদান করেন । এই সার্ভিসের অধীনে ধান ও তেল বীজ গবেষণায় বিভিন্ন পদে এবং ঢাকা সেকেন্ডারী এগ্রিকালচারাল স্কুলে শিক্ষক তার বিভিন্ন পদে ১৯৫৭ সালে পর্যন্ত কাজ করেন । পূর্ব পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল সার্ভিসে যোগদেন একই বছর । ধান, গমে, ইক্ষ, ভু্ট্টা ও তেলবীজ নিয়ে গবেষণা এবং কৃষি কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন ১৯৬৮ পর্যন্ত । এই সময়ের মধ্যে ( চাকুরিরত অবস্থায় ) তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন । তিনি ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান প্রজননবিদ, ১৯৭০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন । তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের সহযোগী পরিচালক , ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত বীজ প্রত্যয়ন সংস্থার পরিচলক হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ড. আহমাদ গতানুগতিক উন্নত ধানের জাতের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ আলোক সংবেদনশীলতা সংযোজন করেন । সমসাময়িক বিশ্বে আধুনিক ধান গবেষণায় তাঁর এই অভিনব সংযোজন ছিল অভূতপূর্ব। বিভাগীয় প্রধান থাকা কালে ধানের জাত উন্নয়ন , পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এ সবের বাস্তবায়ন দ্বারা ৩০টি উন্নত জাতের ধান উদ্ভাবন করেন । এর মধ্যে বিআর৩, বিআর৪, বিআর১১ বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য । বিআর৪ ধান উদ্ভাবনের ফলে ১৯৭৫ সালে বার্ষিক ধান উৎপাদনে ৮ মিলিয়ন টন থেকে ২০ মিলিয়নটনে উন্নীত করা সম্ভব । বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তার সরাসরি অংশ গ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য । ড. আহমাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমিটি এবং বিভিন্ন কারিগরি সংগঠনের সদস্য । তিনি প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশ নেয়ার জন্য বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন । দেশি ও বিদেশি প্রকাশনায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২০টি । তিনি ১৯৭৪ সালে বঙ্গ বন্ধু স্বর্ণ পদক লাভ করেন । তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণা দলকে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার , ১৯৮০ সালে জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ব্রোঞ্জ ফলক এবং ১৯৮৬ সালে বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবুল্লাহ ট্রাষ্ট জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হয় । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য তাকে অবশেষে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত করা হয় ।