Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৫ এপ্রিল ২০২২

কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সাফল্য

 

১. বোরো মৌসুমের ৪১.০৫ ভাগ জমিতে ব্রি ধান২৮ (১৮.৯৩ ভাগ) এবং ব্রি ধান২৯ (২২.১২ ভাগ) আবাদ হচ্ছে। আমন মৌসুমে ব্রি ধান১১ এর সাথে ব্রি ধান৪৯ ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমন মৌসুমে ব্রি ধান৪৯ প্রায় ১৫ ভাগ জমিতে চাষ হয়। আউশ মৌসুমে ব্রি ধান২৮ প্রায় ৭.৫১ ভাগ এবং ব্রি ধান৪৮ ৪৬.০৮ ভাগ জমিতে চাষ হচ্ছে। বোরো মৌসুমে ২৫ ভাগ জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ হচ্ছে।
২. ব্রি’র জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান৮৯ সর্ব্বোচ্চ ফলন দিচ্ছে (৬.৬৯ টন/হেঃ) এরপরই রয়েছে ব্রি ধান২৯ যার গড় ফলন ৬.৫১ টন হেঃ। আমন মৌসুমে ব্রি ধান৮৭ সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে (৫.১৫ টন/হেঃ) এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রি ধান৫২ (৫.০২ টন/হেঃ) ব্রি ধান৮২ আউস মৌসুমে ও সর্বোচ্চ ফলন দেয় (৪.৪৮ টন/হেঃ)। ফলনের দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ব্রি ধান৪৮ (৪.৪৭ টন/হেঃ) বোরো হাইব্রিড ধানের গড় ফলন ৭.৪৬ (টন/হেঃ)
৩.  আউশ, আমন এবং বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন লাভজনক। ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো 
অধিক শ্রমিক এবং সেচ খরচ।
৪. কৃষকগন প্রয়োজনের তুলনায় অধিক বীজ ব্যবহার করে থাকেন। অন্যান্য সার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করলেও ইউরিয়া সার বেশি ব্যবহার করেন। সারের সঠিক মাত্রা সম্পর্কে কৃষকগন ওয়াকেবহাল নন। বোরো ধানের গড় ফলন আউশ এবং আমন ধানের চেয়ে বেশী হলেও আমন ধানের আবাদ বেশী লাভজনক।
৫. মানব শ্রম ধান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপর দিকে কৃষক নিজে ধান থেকে প্রাপ্ত আয়ের সর্বোচ্চ অংশের ভাগীদার।
৬. বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের অপর সম্ভাবনা থাকলেও প্রাকৃতিক অবস্থা ও দামের অনিশ্চয়তা এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত।
৭. ধানের জমি আম বাগানে রুপান্তরিত হওয়ার কারন হিসেবে ৭৫% কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর নেমে যাওয়া, আম চাষ  উপযোগী কৃষি পরিবেশ, শস্যের তুলনায় সহজ চাষাবাদ পদ্ধতি এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করেন। ধান চাষে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ১.১৭ টাকা আয় হয়। অন্যদিকে আম চাষে এক টাকা বিনিয়োগ করলে ৫.২০ টাকা আয় পাওয়া যায়।
৮. বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণের নিমিত্তে যে সমস্ত কৃষকদের নির্বাচন করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষক উক্ত ধানের জাত সম্পর্কে অবগত আছেন। যে সমস্ত এলাকা ধানের জাত সম্প্রসারনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ঐ সমস্ত এলাকা পানির স্বল্পতার কারনে দীর্ঘ জীবনকাল বিশিষ্ট ব্রি ধান২৯ আবাদের উপযোগী নয়। বাজারে বীজের প্রাপ্রতা এবং সংরক্ষণ সুবিধা থাকার কারণে কৃষকগন বীজ সংরক্ষন করেন না।
৯. ধান বাজারজাত করার ক্ষেত্রে মিলারগন সর্বোচ্চ লাভ করে থাকে। লাভের দিক দিয়ে পরবর্তী অবস্থানে আছে খুচরা বিক্রেতা। ধান বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রে মিলার এবং পাইকারী বিক্রেতারাই সর্বোচ্চ খরচ বহণ করে। মোট লাভের অর্ধেকের বেশি (৫৮%) যোগান শৃংঙ্খলের সাথে সংশ্লিষ্ট পেয়ে থাকে যা কাংখিত নয়। ধান/চালের বাজারজাত কাঠামোতে মধ্যসত্ত্বভোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নির্ধারণ করাও জরুরী।
১০.আমন ও বোরো ধানের উৎপাদনের ধারা ক্রমবর্ধমান থাকার কারণে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধানের মোট উৎপাদন ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায় যদিও পরবর্তীতে উৎপাদন কমার সম্ভাবনা রয়েছে।ধানের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ধারা মোট মজুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানির পরিমানও কমাবে বলে আশা করা যায়।
১১. মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে চালের ভোগ কমলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে চালের চাহিদা বাড়বে।
১২. উচ্চ জ্বালানী মূল্য ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধির কারণে সেচ খরচ প্রতি বছরই বাড়ছে। আগামী ২০২৪ সাল নাগাদ অগভীর নলকূপ এবং গভীল নলকূপ দিয়ে সেচ দিলে খরচ যথাক্রমে ২০% ও ১৯% বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
১৩. হাইব্রিড ধানের জমির পরিমান উঠানামার পাশাপাশি ২০০২-২০১১ মেয়াদে তা ক্রমহ্রাসমান। একই সময়ে ব্রিধান২৯ এবং অন্যান্য আধুনিক ধানের এলাকা উঠানামা করছে। হাইব্রিড ধানের ফলন এলাকাভেদে ভিন্ন হচ্ছে যদিও এর ফলন মধ্যম মেয়াদী ব্রি ধান২৮ এর চেয়ে অনেক বেশী।
১৪. দক্ষিনাঞ্চলের ফসলের পর্যায়ক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে উক্ত এলাকাতে বোরো এবং আউশ ধান আবাদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের স্বল্পমেয়াদী আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। দেশেরে দক্ষিনাঞ্চলের জন্য লম্বা চারা বিশিষ্ট জাতের পাশাপাশি ইউ এস জি প্রয়োগ যন্ত্র এবং ধান শুকানো যন্ত্রের ব্যবহার সম্প্রসারনের মাধ্যমে ধানের আবাদ বৃদ্ধি কর সম্ভব।
১৫. ধান ভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের কারণে খরা প্রবণ রাজশাহী এলাকার কৃষকদের ধান উৎপাদন ও আয় বেড়েছে।
১৬. ১৯৭১/৭২ থেকে ১৯৮৩/৮৪ মেয়াদে ধানী জমি বৃদ্ধির হার ছিল ০.৮৩ ভাগ এবং ব্রি  উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সম্প্রসারণের কারণে মোট উৎপাদন বেড়েছে। ১৯৮৪/৮৫ থেকে ২০১৮/১৯ মেয়াদে আউশ, আমন এবং গমের জমির প্রবৃদ্ধি কমেছে, বোরো এবং ভূট্টার জমির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৭. বাংলাদেশে চালের নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে বিক্রি করার প্রবনতা লক্ষনীয়। ব্রি ধান২৮ কে পরিবর্তন করে মিনিকেট এবং পাজামকে পরিবর্তন করে নাইজারশাইল চাল তৈরী করা হচ্ছে।
১৮. যে সমস্ত কৃষক অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করেন না তারাও সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য ধান বিক্রি করে আবার কিনে খান।
১৯. এল সি সি প্রযুক্তি এবং ইউ এস জি সার ব্যবহার করে ইউরিয়া সার সাশ্রয় করা যায়। এক সাথে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে ধানের ফলন ও বাড়ে।
২০. ড্রাম সিডারের মাধ্যমে জমিতে বীজ বপন করলে ধানের ফলন এবং আয় বাড়ে, যদি ও উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে জমিতে বেশী আগাছা দেখা যায় যা দূর করতে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগে।
২১. ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ চালিত সেচের উপর সরকার ভর্তূকী দিয়ে থাকে। কিন্ত্তু বেশীরভাগ কৃষকই উক্ত ভর্তূকী সম্পর্কে অবগত নন। অধিকন্ত্ত, ভর্তূকীর সূফল কৃষকের পরিবর্তে সেচ যন্ত্রের মালিকগন ভোগ করে থাকে।
২২. জমিতে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ৩০% পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। যে সমস্ত এলাকায় চুক্তি ভিত্তিক সেচ খরচ নির্ধারণ করে ধান চাষ করা হয় সেখানে উক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষীর কোন লাভ হয় না। তবে সেচ যন্ত্রের মালিক নিজের জমিকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন। 
২৩. ১৯৯৬-২০০৯ মেয়াদে ব্রি ধান২৯ এ গবেষনা বিনিয়োগে প্রতি এক টাকা বিনিয়োগ করে ১.৫৭ টাকা হারে আয় পাওয়া গেছে।
২৪. বি আর১১ গবেষনা বিনিয়োগে প্রতি এক টাকা বিনিয়োগ করে ১.৫০ টাকা হারে আয় পাওয়া গেছে। উক্ত জাত আবাদ করে বাড়তি ফলন থেকে ১০৯.৮৩ বিলিয়ন টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে।
২৫. ১৯৯০-৯১ থেকে ২০১৭-১৮ মেয়াদে ব্রি’র গবেষনা ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ থেকে প্রতি ১ টাকা খরচ করলে ৯.০ টাকা লাভ পাওয়া যায়।
২৬. ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যারা শুধু ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত চাষ করেছিল তারা ৩.০০ ভাগেরও বেশি দ্রারিদ্রের হার কমাতে পেরেছিল।
২৭. সময়ের ব্যবধানে চিকন ও মাঝারী মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে এবং মোটা চালের চাহিদা কমেছে।
২৮. সুগন্ধি চালের চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় এর আবাদ এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে।